নিউজ ডেস্কঃ বিএনপি সরকারের সময় শুধু বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে ২০ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিদ্যুৎ চাইলেই নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালাতো বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এমনটি জানান প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
অথচ ২০০৯ সালে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের প্রতিটি জনপদে, প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেয় বিদ্যুৎ। দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করেছে এই সরকার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের স্ট্যাটাসে রোববার তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছিল এক যুগ আগেই। তখন এই স্বপ্নকে অসম্ভব কল্পনা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। ২০০৯ থেকে এক যুগেরও বেশি সময় পর সেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিয়েছে। সত্যি সত্যি বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে দেশের আনাচ-কানাচে, ঘরে ঘরে।’
স্বাধীনতার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনগোষ্ঠীর ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতের সুবিধা পেয়েছিল। এরপর গত এক যুগে বাকি ৫৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎসংযোগের আওতায় এসেছে। এক যুগে এ অভাবনীয় সাফল্যের মাধ্যমে স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিববর্ষ পূর্তিতে দেশের সব নাগরিককে বিদ্যুতের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে এই সরকার।
চলতি বছরের ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বৃহত্তম ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের পর দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপি সরকারের সময়ের দুর্নীতি ও মানুষের দুর্ভোগ-বিক্ষোভের ঘটনাবহুল চিত্র এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন জয়।
রোববার রাতে তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা ভিডিওর শিরোনামে লেখেন, ‘বিদ্যুৎ চাইলে গুলি করত বিএনপি, আওয়ামী লীগ পৌঁছে দিলো আলো।’
ভিডিওতে বলা হয়, ‘২০০৫ সালের রমজান মাস। কার্তিকের কাঠফাটা গরমে সাধারণ মানুষের প্রাণন্তকর অবস্থা। ঢাকা শহরজুড়ে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। আর সারা দেশে তো বিদ্যুৎই থাকে না। এমনকি ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময়েও বিদ্যুৎ না থাকায় ক্ষুব্ধ হয় আপামর জনতা। অথচ সে সময় শুধু বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। ফলে বিএনপির আমলজুড়েই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় দেশ।’
আওয়ামী লীগের সময়ের তুলনায় বিএনপির সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম ছিল জানিয়ে বলা হয়, ‘১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করেছিল, ২০০১ সালে আবার বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে তারেক রহমানের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা কমে হয় মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট।
‘তার অর্ধেকই সরবরাহ করা হত ঢাকার কয়েকটি অভিজাত এলাকায়। বাকি অর্ধেক বরাদ্দ রাখা হত সারা দেশের জন্য। এতে শীতকালেও নজিরবিহীনভাবে বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয় দেশজুড়ে।’
শুধু তাই নয়, ‘বিএনপি-জামায়াতের আমলে খোদ ঢাকাতেও দিনের বেলা মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়মিত স্কুলে ক্লাস নিতে বাধ্য হয়েছেন শিক্ষকরা। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি উত্তোলনও ব্যাহত হয়েছে শহরে। ফলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে রাজধানীর সাধারণ জনগণ।’
‘এ সময় গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ না থাকায় চাষাবাদের জন্য ডিজেল চালিত সেচ পাম্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন কৃষকরা। সেই সুযোগে ডিজেল ও সারের দামও বাড়িয়ে দেয় ‘হাওয়া ভবন’ সিন্ডেকেট। কিন্তু দেশের মানুষ তখন আর সহ্য করতে না পেরে তারেক-মামুন গংদের লুটপাটের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করে।’
সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেয়ার করা ভিডিওতে আরও বলা হয়, ‘২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের ৪০টি জেলার সাধারণ মানুষের ওপর একযোগে হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের পেটোয়া বাহিনী। এভাবেই হত্যা ও খুনের রাজত্ব কায়েম করে দেশকে নৈরাজ্যের অন্ধকারে ডুবিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে তারেক রহমান ও তার বন্ধুরা।’
এরপর দেখানো হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের বদলে যাওয়ার চিত্র। সেখানে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩ বছরে বদলে গেছে পুরো দৃশ্যপট। দেশের শতভাগ মানুষ ভোগ করছে ২৪ ঘণ্টার বিদ্যুৎ সুবিধা। রাজধানীর মানুষের কাছে লোডশেডিং এখন ইতিহাস মাত্র।’
এসময় গ্রামের উদাহরণ টেনে বলা হয়, ‘সেখানকার মানুষরা ভালো আছে। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। প্রত্যন্ত গ্রামের হারিকেনটিও এখন চলে গেছে জাদুঘরে।’
আজকের বাংলাদেশ বদলে গেছে। শতভাগ বিদ্যুতের ওপর ভর করে দেশ ডিজিটাল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। অথচ এখনকার প্রজন্ম জানেই না একসময় বিদ্যুতের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে মানুষদের। প্রধানমন্ত্রী তাদের সেই রক্ত বৃথা যেতে দেননি। ক্ষমতায় আসার পরই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। টানা তৃতীয় মেয়াদের সময়ে পুরো দেশ আলোকিত হয়েছে। নতুন প্রজন্ম যাতে আর অতীতের অন্ধকারে নিমজ্জিত না হয় সেই প্রচেষ্টা চলছে।