রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে এক ছাত্রের গলায় ছুরি ধরে ছাত্রলীগের এক নেতা ২০ হাজার টাকা কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মারধরের পর টাকা কেড়ে নেওয়ার এ ঘটনা কাউকে জানালে পরিণতি বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো হবে বলে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে এই নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সামছুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম ভাস্কর সাহা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ভাস্কর মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী তিনি। গত শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মতিহার হলে সামছুলকে আটকে রেখে টাকা কেড়ে নেওয়ার এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তরে এসব কথা জানিয়ে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
লিখিত অভিযোগে সামছুল ইসলাম বলেছেন, নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি হলে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে তিনি পরিবার এবং ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করেন। শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর তাঁর কক্ষে ডেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাঁকে আটকে রাখা হয় এবং রড ও স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে তিনি আহত হন। এ সময় ভুক্তভোগীর কাছে থাকা মোবাইল সার্ভিসিংয়ের প্রায় ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি রাত ১১টার মধ্যে আরও ৬ হাজার টাকা চাঁদা না দিলে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন তাঁরা। তা ছাড়া, এসব কথা সাংবাদিক কিংবা পুলিশকে জানালে বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো তাঁকেও মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে সামছুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার পরিবার খুব অসহায়। সে জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে পরিবারের খরচ বহন করছি। কিন্তু এ কাজ করার জন্য
ছাত্রলীগ নেতা চাঁদা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে ৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হই। কিন্তু এতে হবে না বলে হলকক্ষে ডেকে নিয়ে ভাস্করসহ আরও কয়েকজন আমাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।’
পরে রাত ১০টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তরে আসেন অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা। এ সময় তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। কারও ইন্ধনে তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি কারও কাছে চাঁদা দাবি করিনি। এমনকি কাউকে মারধরও করিনি। কারও ইন্ধনে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এই ছাত্রলীগ নেতা।
ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে অন্য কোনো শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া একধরনের অপরাধ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাত ১১টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডিসহ মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ আলোচনায় বসেন। প্রায় আধা ঘণ্টা চলে আলোচনা। পরে প্রক্টর দপ্তরেই ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন সদস্যের এ কমিটিতে ড. আরিফুর রহমানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়া ড. আল মামুন ও ড. জহুরুল আনিসকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। অভিযোগ সত্য হলে ভাস্করের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র:আজকের পত্রিকা