ডেস্ক নিউজ ঃ সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণে বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও দেশের অর্থনীতির গতি সচল থাকার পাশাপাশি মাথাপিছু আয় বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে বৃহস্পতিবার নরসিংদীতে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার প্রকল্পের ভিত স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান। এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিটাক, বিসিক ও বিএসইসি নির্মিত চারটি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। সারা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে; খাদ্যাভাব সৃষ্টি করেছে।
‘আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ এবং প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে এবং নগদ অর্থ সহায়তার ফলে আমরা আমাদের অর্থনীতির গতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই এই করোনা সময়েও আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনকেও আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের নীতি এবং কর্মসূচির ফলে বর্তমানে আমাদের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আমরা প্রণয়ন করেছি, যার ফলে বাংলাদেশে জলবায়ু অভিঘাত থেকে রক্ষা পাবে। বাংলাদেশে তার উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সুন্দর জীবন পায়, তা নিশ্চিত করবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কৃতিত্ব দেশের জনগণকেই দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমাদের বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আজকে বাংলাদেশে উন্নয়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’
দেশের রপ্তানি আয় প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০৮-০৯ অর্থবছরে আমাদের মোট রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন ডলারে আমরা উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে আমরা প্রায় ২০২টি দেশ বা অঞ্চলে ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করতে পারছি।’
উন্নয়নকে শহরমুখী না করে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল, তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত জনশক্তি যাতে গড়ে ওঠে, তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। আমরা জাতীয় শিল্প নীতিমালা ২০২১ চূড়ান্ত করেছি।’
গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভিজ ও প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে অর্থাৎ ভ্যালু অ্যাড করতে পারলে আমরা যেমন বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হব, পাশাপাশি আমার নিজের দেশের মানুষেরও, যেহেতু ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, সেখানে আমাদের বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে; আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
দেশের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করে প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী আমরা পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার বাড়াচ্ছি। কারণ পরিবেশ রক্ষা করাটা এখন সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সব থেকে বাংলাদেশ একটি ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে। আমরা প্রতিটি শিল্প-কলকারখানা থেকে শুরু করে, যত প্রতিষ্ঠান তৈরি করছি, সেখানেই আমরা পরিবেশবান্ধব যাতে হয়, তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
সারা বিশ্বে তৈরি পোশাক খাতে ১০টি গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে ৭টি এখন বাংলাদেশে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার প্রকল্প
২০১৪ সালে নরসিংদীতে ঘোড়াশাল এবং পলাশে দুটি পুরোনো ইউরিয়া সার কারখানার পরিবর্তে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, জ্বালানিসাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানার উদ্যোগ নেয় সরকার।
প্রকল্পটির ভিত স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন এ সার কারখানায় দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন (বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ টন) দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে।’
তিনি বলেন, ‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।’
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাপান ও চীন। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সরকারপ্রধান।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বহুতল ভবন ও মাদারীপুরে সম্প্রসারিত বিসিক শিল্প নগরী, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রে (বিটাক) টেস্টিং সুবিধাসহ টুল ইনস্টিটিউট এবং বিএসইসির এলইডি লাইট (সিকেডি) অ্যাসেমব্লিং প্ল্যান্ট প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ফলে বর্তমানে শিল্প নগরীতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৪১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা এবং ৮ লাখের অধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিসিককে শক্তিশালী করতে আজ আমরা তেজগাঁওয়ে বিসিকের বহুতল ভবন এবং মাদারীপুরে সম্প্রসারিত বিসিক শিল্প নগরী নির্মাণ উদ্বোধন করছি।’