নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার ও জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করা নিজের দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের জনগণ যেন কখনও সেবা বঞ্চিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিজ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
ঢাকার শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন অ্যাকাডেমিতে রোববার সকালে আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
আজ ১২১, ১২২, ১২৩তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করা কর্মকর্তাদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সনদ তুলে দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের কাছে ক্ষমতা ছিল ভোগের বস্তু। তারা সেটা দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়তে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা আসলে, প্রধানমন্ত্রী না। আমার দায়িত্ব হচ্ছে এ দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা, তাদের জীবনমান উন্নত করা, দেশের উন্নয়ন তৃণমূল পর্যায় থেকে করা।’
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল কারিগর সরকারি কর্মকর্তারা বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘একটি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ সিভিল সার্ভিস সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অন্যতম সহায়ক শক্তি বলে আমি মনে করি। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিই, সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কিন্তু আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের জনগণ, তারা যেন কখনও সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কারণ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই তো আমাদের এই স্বাধীনতা।’
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবসময় মানুষের কথা চিন্তা করে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যে যে এলাকায় কাজ করবেন, সেই এলাকা সম্পর্কে জানতে হবে, সেখানকার মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে জানতে হবে, জীবন-জীবিকা সম্পর্কে জানতে হবে এবং কীভাবে তাদের উন্নতি করা যায়, সে বিষয়ে আপনাদেরই সব থেকে ভালো সুযোগ রয়েছে।’
সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রাখতেও সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সেসব এলাকায় কাজ করার সময় জমি নির্দিষ্ট করা বা নানা কাজে সমস্যা দেখা দেয়। সেখানে আমি মনে করি, একটা সমন্বয় একান্তভাবে প্রয়োজন। কাজগুলো যাতে সুপরিকল্পিতভাবে হয়, সেদিকটায় বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত।
‘সেটা শুধু আপনাদের বলব না, আপনারা নবীন কর্মকর্তা, আমাদের যারা উচ্চপর্যায়ে আছে, বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং আমরা যেগুলো করছি, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো দেখতে হবে।’
পাকিস্তান আমলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বাঙালিদের সবসময় পিছিয়ে রাখা হতো বলে জানান প্রধানমন্ত্রী; তুলে ধরেন পরিসংখ্যান।
তিনি বলেন, ‘এই বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা। কাজেই স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের ঘরে পৌঁছায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
সরকারি কর্মকর্তারা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কারণ, আমরা চাই এ দেশ এগিয়ে যাক।’
দেশে কোনো ঘরহীন, ভূমিহীন মানুষ থাকবে না বলে নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘একটা ঘর পাওয়ার পর মানুষের মুখের যে হাসিটা মনে হয়, এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু জীবনে হয় না। তাদের জীবনটা যে একটা অর্থবহ হলো, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’
শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিদ্যুৎ অবকাঠামো উন্নয়ন, এর মধ্য দিয়ে কিন্তু দেশের উন্নতিটা সম্ভব হয়। সে জন্য আমরা একদিকে যেমন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরদিকে চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, আর সেই সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ উন্নয়ন। বিভিন্ন দিকে আমরা সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি, যার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ।’
জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ক্ষমতায় এসে বিএনপি বন্ধ করে দিয়েছিল বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মানুষের কল্যাণটা বড় না, ক্ষমতায় টিকে থাকাটাই বড়। আমি এই নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি মানুষের কল্যাণ কীভাবে করব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
ওই সময় নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের চিন্তা-চেতনা জনকল্যাণমূলক হতে হবে।
‘আপনারা যে যেখানে কাজ করবেন, সেই এলাকায় এলাকাভিত্তিক কোন কোন জিনিসগুলো উৎপাদন হয়, সেগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেগুলো কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং সেটা আমাদের অর্থনীতির কাজে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, এ বিষয়গুলো দেখতে হবে এবং সেভাবেই আপনাদেরকে পরিকল্পনা নিতে হবে; কাজ করতে হবে।’
বিসিএস কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে কর্মদক্ষতা বাড়াতে কক্সবাজারে একটি অ্যাকাডেমি করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সেখানে খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা হোক, সেটাই আমি চাই।’
‘প্রধানমন্ত্রী হয়ে বড় কারাগারে আছি’
সরকারের নবীন কর্মকর্তাদের সামনে সশরীরে হাজির হতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় আমাকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে; বিশেষ জেলে থাকতে হয়েছে। সেগুলো ছিল সাব জেল, ছোট কারাগার। আর এখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে বড় কারাগারে আছি, এটুকুই বলতে পারি।
‘সে জন্য সব জায়গায় যাতায়াতটা এত সীমিত, এত সীমাবদ্ধ যে সরাসরি আপনাদের কাছে আসতে পারলাম না; নিজের হাতে দিতে পারলাম না সনদগুলো। এটা দুঃখজনক।’