

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃএবার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড হাতে দেখা গেছে। শুধু দেখায় যায়নি চলতি মাসের ১৮ জানুয়ারী শনিবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয়রা প্রবেশ করে আম গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে যে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে ভারতের জনগনকে বাধা না দিয়ে বরং আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে বিএসএফ উল্টো বাংলাদেশী সীমান্তবর্তী জনগনের ওপর নিক্ষেপ করে সাউন্ড গ্রেণেড। ছোঁড়ে ককটেল, নিক্ষেপ করে তীর। আর এই হামলার চিত্র ভেসে বাড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যা দেখে বিস্মিত হয়েছে বিশ^বাসী। সেই সময় মহানন্দা ব্যাটালিয়ন ৫৯ বিজিবি’র পক্ষ থেকে এমন কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালে বিএসএফ এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বলে জানান ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্ণেল মো. গোলাম কিবরিয়া।
ভাইরাল এ ছবিতে দেখা যায়, কালিগঞ্জ সীমান্তের ওপারে ভারতের অংশে দাঁড়িয়ে আছেন ৫ জন বিএসএফ সদস্য। এক হাতে বন্দুক আর অন্য হাতে ধরে আছেন সাউন্ড গ্রেণেড। যা বাংলাদেশীদের ওপর একটি নিক্ষেপ করে আরো একটি নিক্ষেপ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা মান্নান হোসেন বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা হঠাৎ করেই কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ৫ থেকে ৬ শত ভারতীয় বাসিন্দাকে নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। পরে যাচাই বাছাই না করেই এপারে আমাদের বাগানের আম গাছ, বরই গাছসহ জমিতে চাষ করা বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি করতে থাকে। পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয়দের ধাওয়া করেন বাংলাদেশী নাগরিকরা। এতে সংঘর্ষ বেধে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ওই দেশের নাগরিকদের সাথে করে সাউন্ড গ্রেণেড ও ককটেল নিক্ষেপ করে এবং তীর-ধনুক দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। হামলায় ২৫ থেকে ৩০ জন বাংলাদেশী ও একজন বিজিবি সদস্য আহত হন। কিন্তু বিএসএফ পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করলেও শান্ত করেছে বিজিবি।
আব্দুল গনি নামে আরও একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বিজিবি সীমান্তে অবস্থান নিয়েছিল শূন্য হাতে। কিন্তু বিএসএফের হাতে ছিল সাউন্ড গ্রেণেড। কিন্তু কেন ? বিএসএফের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ দখল করে নেবে। কিন্তু তাদের জানা উচিত বাংলাদেশীরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, একটা স্বাধীন দেশ পাবার জন্য জীবন দিয়েছে। সুতরাং সেই বাংলাদেশের নাগরিক দেশ রক্ষায় একটুও পিছ পা হবেনা। এমনকি সীমান্ত এলাকার মানুষ দেশের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত আছে। দেশের জন্য যা করা লাগে আমরা তাই করবো।
সীমান্তে বিনা উস্কানীতে বিএসএফের গ্রেণেড নিক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন লংঘণ উল্লেখ করে মহানন্দা ব্যাটালিয়ন ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, এটা অবশ্যই একটা অপরাধ। আমরা আমাদের দেশের নাগরিকদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও তারা সহযোগীতা করে বিষয়টাকে উষ্কে দিয়ে ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছে। পরে বিএসএফের সাথে পতাকা বৈঠকে তারা এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এমন কোন ঘটনা না ঘটানোর প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। তবে সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের বিষয়টি আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। সেখান থেকেই পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। এখন সীমান্ত এলাকা শান্ত রয়েছে। গ্রামবাসীকে শূণ্য রেখা বরাবর না যাবার আহŸান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ করেই ৫০০-৬০০ ভারতীয় নাগরিক শূণ্য রেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ কওে সীমান্তবর্তী বাংঠাদেমী নাগরিকের আম গাছ কেটে বাগান বিনষ্ট করে। এতে বাংলাদেশী ও ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি থেকে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ঐদিন দুপুর ১২টা থেকে শুরু করে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। এ সময় ভারত সীমান্তের নাগরিকরা উত্তেজিত হয়ে বিএসএফের সহযোগীতায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বাংলাদেশীদের লক্ষ্য করে হাতবোমা, ককটেল ও তীর-ধনুক নিক্ষেপসহ বিভিন্নভাবে হামলা করে। এ সময় তাদের সাথে বিএসএফ সদস্যরা যোগ দিয়ে নিক্ষেপ করে সাউন্ড গ্রেণেড। সংঘর্ষে একজন বিজিবি সদস্যসহ ২৫-৩০ জন বাংলাদেশী নাগরিক আহত হন।