

শেরপুর প্রতিনিধি :গত কয়েক দিনধরে অতিবৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের ১৭টি ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে ডুবে মৃত্যু হয়েছে নারী ও কিশোরসহ ৫ জনের। পানির তোড়ে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছগাছালি, গবাদি পশু, বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকটি মহাসড়কসহ অসংখ্যা গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। সংকট তৈরি হয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের।
বৃহস্পতিবার রাত নয়টার পর থেকে শুরু হয় টানা ভারি বর্ষণ। টানা বর্ষণের ফলে বিপদ সীমার ওপরে উঠে যায় জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এসব নদীর বাঁধ উপচে এবং অসংখ্য স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে লোকালয়ে প্রবেশ করে বানের পাানি। সকাল হতেই বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট সব তলিয়ে যায়। আকস্মিক বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। পানিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। এতে ঝিনাইগাতি উপজেলা পরিষদ ও সদর বাজারসহ অন্তত ৭টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি ইউনিয়নগুলো ছাড়াও নদী তীরবর্তী অন্যান্য ইউনিয়ন ও নিম্নাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ে। শুক্রবার রাত থেকে পাহাড়ি নদীগুলোতে পানির তীব্রতা কিছুটা কমে এলেও ভাটি অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। সবমিলিয়ে অন্তত ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয় এ উপজেলার।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার অভয়পুর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী (৩০) ও সহোদর আলমগীর (১৬) চেল্লাখালী নদীর ভেঙে যাওয়া পানির স্রোতে নিখোঁজ হয়। পরে আজ (শনিবার) পানি কিছুটা কমে আসায় বিকেলে নন্নী ইউনিয়নের কুতুবাকুড়া গ্রামের ধান খেত থেকে ওই দুই সহোদরের লাশ উদ্ধার করা হয়। একইভাবে শুক্রবার বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান উপজেলার বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা বেগম। একই দিন সন্ধ্যায় খলিসাকুড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী। এছাড়া আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এখনো পর্যন্ত তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন।
এদিকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে শুক্রবার থেকেই কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শনিবার দিনভর স্পীটবোড, নৌকা, ভেলা, টিউব ইত্যাদি নিয়ে চলে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার অভিযান। এছাড়াও শুকনা খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বানভাসীদের মাঝে। এসব কাজেহ অংশ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা বিএনপি, ছাত্র শিবির ইসনাফ, ও নন্নী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ একেএম মাহবুবুর রহমান রিটনসহ বিভিন্ন মানবিক সংগঠন।
এদিকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরপদ আশ্রয়ে ছুটতে দেখা গেছে। গবাদী পশুসহ কেউ আত্মীয় বাড়ি আবার কেউ বা ছুটেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে।
প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ দেশের অর্থশালীদের দ্রুত বানভাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।