রাতের নিস্তব্ধতায়, ফজলুল হকের হলের অন্ধকারে
একটি অসহায় ছায়া দাঁড়িয়ে—
তফাজ্জল, ক্ষুধার্ত, ভাঙা হৃদয়ের মানুষ
খুঁজছিলো একটুকরো খাবার, একটুকরো মায়া।
মা নেই, বাবা নেই, ভাইও চলে গেছে
তার জীবন যেন একাকীত্বের এক দীর্ঘশ্বাস—
প্রেমের আঘাতে যে মন ভেঙেছিল
আজ সেই মন আরোও ভেঙে পড়েছে সমাজের নির্মমতায়।
“আমাকে মারবেন না,” কাঁপা কণ্ঠে চিৎকার করে বলেছিল তফাজ্জল,
“আমি চোর নই, আমি ক্ষুধার্ত শুধু, ভাই।”
কিন্তু কে শোনে সেই আর্তি?
কে বোঝে ক্ষুধার নিরব কান্না?
শিক্ষার আঙিনায়, জ্ঞানের মশালে যারা আলোকিত
তারা কি হারিয়েছে মনুষ্যত্বের আলোকছটা?
তাদের হাতে একটি তরতাজা প্রাণের শেষ নিঃশ্বাস
তফাজ্জলের নিঃশেষ হয়ে যাওয়া জীবনের করুণ পরিণতি।
তুমি কি দেখেছিলে তার চোখের ভিতর?
সেখানে ছিল মায়ের মায়া, বাবার স্মৃতি
তুমি কি শুনেছিলে তার চুপচাপ, নীরব কান্না?
নাকি সেই কান্না ঢাকা পড়ে গেলো নির্মম আঘাতের শব্দে?
একবারও কি কেউ ভাবল না
এই মানুষটা কি সত্যিই চোর?
না, তার অপরাধ ছিল একজন ক্ষমতাহীন মানুষ
তার দোষ ছিল তার ক্ষুধার্ত দেহ আর শূন্য মন।
তফাজ্জল হারিয়ে গেলো সেই রাতের গভীরে
মেডিকেলের ঠাণ্ডা বিছানায়, নিস্তব্ধতায়—
তার পাশে ছিল না কেউ,
তার জন্য কাঁদার মতো পরিবার নেই, নেই কোনো বন্ধু।
নেই কোন ছাত্রপক্ষ , প্রতিবাদী রাজনৈতিক দল
নেই সেনাবাহিনী কিংবা
তাঁকে আগে থেকে চিনতো না অধ্যাপক ড মুহাম্মদ ইউনুস ।
আজ তার গল্প পড়ে বুকের ভেতর একচিলতে ব্যথা অনুভব করছি
কান্না আসছে খুব , কিন্তু তফাজ্জল তো আর ফিরে আসবে না—
ওদের ফিরে আসা না আসায় কোন আফসোস নেই কারও
তার গল্প যেন একেকটি নিঃশব্দ কান্নার প্রতিধ্বনি
এ সমাজ কি কখনো বুঝবে সেই কান্নার ভাষা?
তফাজ্জলের মৃত্যুর পর, এই পৃথিবী কি কিছু শিখবে?
নাকি এমন আরও কত তফাজ্জল
হারিয়ে যাবে নিঃশব্দে,
একটু মায়া, একটু মানবিকতা না পেয়ে?
তফাজ্জল, তুমি আজ নেই, কিন্তু তোমার কান্না রয়ে গেছে—
আমাদের হৃদয়ের মধ্যে যা কখনো মুছে যাবে না
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যাবে আমার –
তফাজ্জল যখন মারা যাচ্ছিলো তখন কী বুঝতে পেরেছিল ও মারা যাচ্ছে ?
নাকি মনে করেছে আরেকটু ব্যাথা সহ্য করতে পারলে ওরা আবার ভাত খাওয়াবে!