নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিকাল ৪:০০টায় ডাটাস্কেপ রিসার্চ এন্ড কনসাল্টেন্সি লিমিটেড- এর আয়োজনে রাজধানীর মিরপুরস্থ নিজস্ব অডিটোরিয়ামে “আগামীর উন্নয়ন ভাবনায় কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার” শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত সেমিনারে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং (টিভিইটি) বিষয়ক উদ্ধতন পরামর্শক জনাব এবিএম খোরশেদ আলম, (অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব) এবং সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা- ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এনএসডিসি)। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি (এনএপিডি)-র পরিচালক- গবেষণা ও উন্নয়ন ড. মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এবং গণসক্ষরতা অভিযান-এর উপ-পরিচালক জনাব তপন কুমার দাস। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাটাস্কেপ রিসার্চ এন্ড কনসাল্টেন্সি লিমিটেড- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব রাকিব হোসেন। উক্ত সেমিনারে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, পেশাজীব এবং কর্পোরেট সেক্টরের কর্মী ও কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সেমিনার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ডাটাস্কেপ একাডেমির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোশাররফ হোসেন।
দুইটি পর্বে বিভক্ত সেমিনারের ১ম পর্বে ছিল আলোচকগণের বক্তব্য উপস্থাপন। মূল আলোচনায় জনাব এবিএম খোরশেদ আলম বলেন- বাংলাদেশে শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, যেমন- কর্মমুখী শিক্ষার অভাব, বেকারত্ব, চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি না পাওয়া, নারীর কর্মসংস্থানের স্বল্পতা, চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা অন্যতম। কোভিড-১৯,ঘনঘন বন্যা, মাত্রাতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি, ডলার সংকট, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব ইত্যাদি নানান কারণে বাংলাদেশে শ্রমবাজার অনিশ্চয়তার দোলাচালে রয়েছে । দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের অপারগতা বিদেশে কর্মসংস্থানকে বারবার সংকটে ফেলছে। তিনি বলেন- দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে দেশে ও বিদেশে শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়া এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সম্পূর্ণ সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। কেবল প্রয়োজন দেশ বিদেশের শ্রমবাজার চাহিদা নিরূপন করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, প্রযুক্তি নির্ভর কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটানো। আলোচকগণ বলেন- বাংলাদেশে ও বিদেশে শ্রমবাজার মোটেও সংকুচিত নয়, বরং দিনদিন প্রসারিত হচ্ছে। প্রযুক্তি নির্ভরতা, আইসিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার ইত্যাদি কারণে আজ শ্রমবাজার নানা বৈচিত্রতায় পরিপূর্ণ। এখন প্রয়োজন এই বৈচিত্রপূর্ণ চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে আসা।
সেমিনারের ২য় পর্বে ছিল প্রশ্ন-উত্তর। অংশগ্রহণকারীগণ কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার নিয়ে নিজেদের মতামত প্রদানের পাশাপাশি আলোচকগণকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন আর আলোচকগণ তাঁদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও সমসাময়িক প্রবণতা থেকে উত্তর দেন। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে উঠে আসে-
- বাংলাদেশে বর্তমানে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর চেয়ে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এটিকে বলা হচ্ছে, ‘ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট’ বা ‘জনমিতিক লভ্যাংশের বোনাসকাল’। এ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত এগিয়ে যাবে।
- জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি- ২০২২ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার,একসাথে দরকার সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে দক্ষতা-নির্ভর ও কর্মমূখী শিক্ষা, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা।
- বিদেশে শ্রমবাজারে বিশেষ করে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো এবং চাহিদা অনুয়ায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা।
- ছাত্র-ছাত্রীদের (শিক্ষার বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে) গণ-ইন্টার্নশিপ দিয়ে অন্তত ছয় মাস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টে রাখা, যাতে শ্রমবাজারের সঙ্গে তাদের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়।
- সাধারণ শিক্ষা এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা উভয়ই সেক্টরের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকরি পর্যায়ে পর্যাপ্ত ও সম-পরিমান সুযোগ-সুবিধা তৈরি ও উন্নয়ন করা।
- কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে জব ফেয়ার, জব প্লেসমেন্ট ও এমপ্লয়াদের সঙ্গে সম্ভাব্য কর্মীদের লিঙ্কেজ বা যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা।
- দক্ষতা উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা বাড়ানো ইত্যাদি।