
“ফাইল নাম্বার ৬৩৩”
মহাম্মাদ শাওন
২য় পর্ব ঃ দাদুর নথিপত্রের সব কাজ সেরে সবেমাত্র পূর্বের জায়গায় এসে বসেছি দাম্ভিক ঘরঘর গলায় লোকটি বলে উঠল-একটা গল্প শুনবে? বেশ জমাটে গল্প, গল্প বললেও ভুল হয়, আমার এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা বলা যায়, শুনবে কি? ফাইল বের হতে এখনো ঢের দেরী।
ভদ্রলোকের কথাবার্তা, বর্তমান আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে তার জ্ঞান এই সব কিছু মিলিয়ে আমার মনের মধ্যেএকটা কৌতুহলী মেঘ আগে থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল। তাই আর না করা গেল না।
সঙ্গে রাখা পানির বোতলের দুই ঢোক পানি খেয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন ভদ্রলোক-তখন আমার অল্প বয়স। এই মনে করো উত্তাল যুবক । বেস্ ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম। দেশে তখনও থেকে থেকে গ্রামের পর গ্রাম জলে, এইসবের মধ্যে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায় অনেক খুঁজেও কাউকে পাই না দুটো খাবারের জন্য আমার মত আর একজন কে সাথে নিয়ে মেলায় মেলায় হাটে হাটে আতরের ব্যবসা শুরু করলাম। এরইমধ্যে রাজবাড়ীর এক মেলায় ভারতের এক আতর ব্যবসায়ীর ব্রিজ লালের সাথে ঘনিষ্ঠতা ও পরিচয় অনেক বেড়ে যায়। তারই সূত্র ধরে যাত্রা ভারতের উদ্দেশ্যে। আমার সাথে আমার বন্ধু এবং আতর ব্যবসার আটানার অংশীদার বেলাল সহযাত্রী হয়। বেলাল বেশ ভালো ছেলে কখনো কোনদিন আমার কাছে হিসাব চাইত না। একবার আমি ভীষণ রকম জ্বরে ভুগছিলাম সে দিন রাত আমার শুশ্রূষা করে এবং আমাকে সারিয়ে তোলে..
তো চলো এবার যাই সেই রোমাঞ্চকর যাত্রায়..
আমি আর বেলাল একটা স্টিমারে করে রাতের অন্ধকারে পার হয়ে চলে গেলাম ভারত। স্টিমারের সামনের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে চিবুক শক্ত করে তাকিয়ে আছি সামনের দিগন্তের উদীয়মান সূর্যের দিকে। সূর্যের প্রথম আলো চোখে এসে ধরতেই বেলালের ঘুমটা ভেঙে গেল। নদীর ঢেউয়ের মতো আমার মনেও বিভিন্ন রকমের চিন্তা চেতনা যেন উত্তাল হয়ে উঠল। ভারত আসতেই টাকা পয়সা তো সব শেষ আর যে কিছু কিনে খাব সেই পয়সাটা ও তো নেই. আমার মনের কথাটা কেমন করে যেন সে বুঝে গেল ঘাড়ে একটা হাত দিয়ে বলল-কিছু একটা করে নেব ভাই।
প্রায় দিন দশেক দুজনে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরার পরে কাজের সন্ধানে আমরা গেলাম এক জমিদারের কাছে। কোনো এককালে বিশাল এক জমিদারী ছিল এদের। বড় জমিদার মারা যাওয়ার পরে তার ছেলে এখন ব্যবসা ও সম্পত্তির হাল ধরেছে তারই সূত্র ধরে আমাদেরকে পাঠানো হলো জমিদার বাড়ি থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরের পশুশালার দায়িত্বে আমাদের আতর ব্যবসার কারণেবিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে করতে হিন্দি ভাষাটাও বেশ রপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কয়েকটা গ্রাম পেরিয়ে এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে গরুর গারিতে দুলতে দুলতে পশুশালা পৌঁছাতে হয়ে গেল পরেরদিন সন্ধ্যা। গঞ্জের বাজারে নেমে আরো কয়েক ক্রোশ পায়ে হেঁটে তবে পৌছালাম পশু শালায় । ইউক্যালিপটাস গাছের এক মানুষ সমান গুরি পুতে পুতে বেশ বড় একটা জায়গা নিয়ে পশুশালাটা বানানো। উচা লম্বা দুটো মেহগনি গাছের ফাঁকা দিয়ে একটু দূরে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে সরু একটা রাস্তা ঘাসের মাঠের বুক চিরে চলে গেছে বাড়ির প্রধান ফটক বরাবর বোধকরি এটি আমাদের আশ্রয় স্থল। এবং আমার মনের ধারনাটা ঠিক হয়েছিল।ওই বাড়িতে আমরা আশ্রয় নিয়েছিলাম।
সবচাইতে আশ্চর্য হয়েছিলাম যেটি দেখে যে আমাদেরকে থাকার জন্য যেই বাড়িটা দেওয়া হয়েছিল সেটি ইংরেজ আমলে লাল জড়ানো ইটের তৈরি একটি বাড়ি, বোধ করি কোন সাহেব বাবুর আমোদ-ফুর্তির জায়গা ছিল এই বাড়িটা। এই তল্লাটে এই বাড়ি বাদে আর কোন জনমানব আছে বলে তো মনে হয় না। বাড়ির সম্মুখভাগে সেই পশুশালা কিন্তু তাতে এখন শুধুমাত্র কিছু গরু আর কিছু ভেড়া লালন পালন করা হয়। বেলাল বাড়িটা দেখে খুব আনন্দ পেয়েছিল কারণ ছিল বাড়ির পেছনদিকে বয়ে যাওয়া নদীটা। বাড়ির ডান দিক দিয়ে ঘুরে একটা রাস্তা বাড়ির পেছনদিকে চলে গেছে সেই রাস্তা কে অনুসরণ করেই আমরা চলে গেলাম বাড়ির পেছনে একটা সরু লম্বা বানানো ঘাটে। অবশ্য পরবর্তীতে গুনে দেখেছিলাম যে সেখানে ১৭ টি সিরি ছিল। সুদক্ষ এক নর্তকীর মতই নদীতে তার নিজ ছন্দে বয়ে চলেছে পানি। বোধকরি নদীর ওপারটা একটা জঙ্গল সূর্য ডুবতে এখনো খানিকক্ষণ দেরি আছে সূর্যটা জঙ্গলের মাথার উপরে যেন ধীরে ধীরে নেয়ে পড়ছে আর সেই দৃশ্য আমরা দুজনে তনময় হয়ে দেখছি।
“ফাইল নাম্বার ৬৩৩” ২য় পর্ব
পরবর্তীতে পর্ব পড়তে চোখ রাখুন Foxnewsbd.com এর উন্মুক্ত লিখনিতে ও ফক্সনিউজ বিডি ফেসবুক পেজে