

বাগমারা (রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ জমির প্রকৃতি-শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না, এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও এবার রাজশাহী জেলার বাগমারায় অনেকটাই বেপরোয়া ভাবে চলছে পুকুর খননের হিড়িক। স্থানীয় প্রশাসন ও আ.লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে কোথাও রাতের আঁধারে আবার কোথাও দিনে বেলা প্রকাশ্যে তিন ফসলি কৃষি জমিগুলোকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে।
এতে করে আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। কৃষকরা না বুঝে হারাচ্ছেন তাদের উর্বর ফসলি জমি, অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন ও এক শ্রেণির প্রভাবশালী পুকুর ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না। এ নিয়ে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না। ফলে পুকুর খনন রাজশাহী বাগমারা উপজেলায় বেড়েই চলেছে।
অপরদিকে, পুকুরের মাটি বিক্রি বিক্রির ফলে পাকা রাস্তায় চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সংস্কারের নামে দিব্যি মাটি বিক্রয় করা হচ্ছে। এতে রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়ে পড়েছে। প্রশাসনকে অবহিত করলেও হচ্ছে না এর প্রতিকার। ওই সকল রাস্তা দিয়ে চলচল করতে গেলে অনেকে সড়ক দুর্ঘটনায় পান হারিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যদিও পুকুর খননের যেমন আইন নেই, আবার পুকুর খনন করা যাবে না এমন আইনও নেই। যার কারণে রাতের আঁধারে আবার কোথাও দিনে বেলা প্রকাশ্যে ফসলি জমি নষ্ট করে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে। এতে করে কৃষি ফসলের জমি হারানোর পাশাপাশি কোথাও কোথাও বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া উঁচু ভিটা জমি কেটে পুকুর তৈরীতে নেমে পড়েছেন মাছচাষিরা। জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করতে নামানো হচ্ছে ড্রেজার মেশিন। বড় মেশিনের সাহায্যে ফসলি জমি কেটে তৈরী করা হচ্ছে পুকুর। পুকুর খনন বন্ধ না হলে যেটুকু বিলের জমি আছে এবার সেটুকুও শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে বাগমারা উপজেলায় পুকুর খননের কারণে আবাদি জমি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। অপরিকল্পীতভাবে পুকুর খননের জন্য ধানের যে জমি কমেছে তার এক তৃতীয়াংশ জমি অনাবাদি হয়ে পরিত্যাক্ত জমিতে পরিণত হয়েছে। গত ১৪ বছরে বোরো ধানের জমি কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এক সময় বোরো ধানে জন্য বিখ্যাত হলেও এখন সেই খ্যাতি আর নেই এখানে। এতে প্রতিবছর খাদ্য ঘাটতি, খাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি লেগেই থাকছে। কিন্তু তারপরও রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ফসলি জমি বা বোরো ধানের জমিতে পুকুর খনন বন্ধ হচ্ছে না।
বর্তমানে খালে বিলে বোরোর জমি আর নেই বললেই চলে। সবগুলোই এখন পুকুরে পরিণত হয়েছে। এখন খাল বিলে পুকুর খননের জায়গা না থাকায় পুকুর খনন করা হচ্ছে উচুঁস্থান আম বাগান বা ভিটা জমিতে। যদিও পুকুর খননের যেমন আইন নেই, আবার পুকুর খনন করা যাবে না এমন আইনও নেই। যার কারণে গত ১৪ বছর ধরে রাজশাহীর বিভিন্ন থানার ওসি, ভূমি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে মোটা অংকের টাকা দিয়ে চলছে পুকুর খননের হিড়িক।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসন অফিস বলছেন, আমরা ফসলি জমি রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছি। কোথাও প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না। অনুমতি ছাড়া, যারাই পুকুর খনন করবে তাদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বলে দায় সারা ভাবে চলছে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে অবৈধ ভাবে পুকুর খননের হিড়িক। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিসার আজাদ আলী জানান, কৃষি জমিতে পুকুর খননের খবর পেলে আমরা উপজেলা প্রশাসনকে জানাই। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না। এমনকি তারা বিষয়টি তদারকিও করে না। এবং খবর পাওয়ার সাথে ভেকু মেশিন বন্ধ রাখতে বলেন পুকুর খননকারী মালিকদের। ফলে অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় না।