নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ভারতীয় ভিসা চালু হলেই ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেভাবেই সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে আগামী পহেলা বৈশাখ ওই ট্রেনটি চালু হতে পারে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের এক কর্তকর্তা।
গত বছর ২৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেন উদ্বোধন করেন। সেদিন ট্রেনটি চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করে। তবে করোনা মহামারির কারণে ট্রেনটি এত দিন নিয়মিত চলাচল শুরু করতে পারেনি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে দুই দেশের যাত্রীবাহী রেল যোগাযোগ। বন্ধ আছে দুই দেশের পর্যটন ভিসা প্রক্রিয়াও। শুধু ব্যবসা, শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুই দেশে জরুরি ভিত্তিতে নাগরিকদের চলাচল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া-আগরতলা ও যশোরের বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর এবং আকাশপথ খোলা রয়েছে।
রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ট্রেনটির চলাচল শুরু করতে গত সপ্তাহেও বৈঠক করেছে রেলওয়ে। আলোচনা হয়েছে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গেও।
গত ২৩ মার্চ ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর সঙ্গে রেল মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন রেলমন্ত্রী নূরল ইসলাম সুজন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্দেশীয় মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে দুই দেশের নিয়মিত পর্যটন ভিসা চালু হলেই বন্ধ ট্রেনগুলো চালু করা হবে বলে মত দেন উভয় দেশের প্রতিনিধিরা।
ট্রেন চালুর বিষয়ে বাংলাদেশে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘রেলপথে কোনো পর্যটন ভিসা এখনও ভারত দিচ্ছে না। তাহলে আমরা ট্রেন চালাব কাদের নিয়ে? এটাই এখন সিদ্ধান্ত যে আমরা আগে ভিসার জন্য যোগাযোগ করব। যখনই ভারতের ভিসার অনুমোদন পাওয়া যাবে, তখনই ট্রেন চালুর বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
করোনার সংক্রমণ কমে আসার কারণে বর্তমানে পর্যটন ছাড়া সব ধরনের ভিসা চালু করেছে ভারত। সড়ক ও বিমান পথে পর্যটন ভিসা দিচ্ছে দেশটি।
সম্প্রতি ভারতীয় হাইকমিশনার এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, অচিরেই ট্যুরিস্ট ভিসা চালু করবে ভারত।
আগামী ২৯ মার্চ করোনার সময়কার নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিচ্ছে দেশটি। এর পরই সড়ক ও রেল পথে দেশটি পর্যটন ভিসা চালু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রেল মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে জানান, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের। তবে দুই দেশের মধ্যে কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বেশ কিছু প্রোটোকল এখনও রয়ে গেছে। এ বিষয়গুলো মীমাংসা হলেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী পহেলা বৈশাখে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।রেলের এই কর্মকর্তা জানান, দুই দেশের ট্রেন চালুর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনা চলছে। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ভাড়া, সময়সূচি এগুলো নির্ধারণ করা আছে। কোন দেশ থেকে কোন দিন ট্রেন যাবে, কয়টার সময় ছাড়বে, এগুলো নির্ধারণ করা আছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, ঢাকা থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এই ট্রেন নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে ভারতের শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়িতে যাবে। আর প্রতি রবি ও বুধবার ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়বে।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতীয় সময় বেলা পৌনে ১২টায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছেড়ে আসবে। ভারতের হলদিবাড়ি স্টেশনে পৌঁছবে বেলা ১টা ০৫ মিনিটের মধ্যে। বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ২৫ মিনিটে আসবে চিলাহাটি স্টেশনে। সেখান থেকে ঢাকায় পৌঁছবে রাত সাড়ে ১০টায়। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি আবারও ভারতের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পরদিন চিলাহাটি পৌঁছুবে ভোর পৌনে ৬টায়। ভারতীয় সময় সকাল ৬টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি হলদিবাড়ি যাবে, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে সকাল সোয়া ৭টায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, এই ট্রেনে চেপে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি যেতে গুনতে হবে সর্বনিম্ন ২ হাজার ৭০০ টাকা, সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৯০০ টাকা।
এসি বার্থে গুনতে হবে ৪ হাজার ৯০০ টাকা। আর এসি আসানের জন্য দিতে হবে ৩ হাজার ৮০৫ টাকা, এসি চেয়ার নিলে ভাড়া পড়বে ২ হাজার ৭০৫ টাকা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই ট্রেনে মোট ১০টি বগি থাকবে। আসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে ভারতমুখী হলে এসি বার্থের সংখ্যা থাকবে ৯৬টি আর ভারত থেকে বাংলাদেশমুখী হলে ১৪৪টি এবং এসি চেয়ারের সংখ্যা বাংলাদেশ থেকে ভারতমুখী হলে ৩১২টি ও ভারত থেকে বাংলাদেশমুখী হলে ৩১২টি।
একসময় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের আটটি রেল সংযোগ ছিল। পাকিস্তান আমলে এসব লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়। দুই দেশের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন্ধ থাকা লাইনগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশের সরকার।
প্রথমে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয় ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল। ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু ও লালন সেতু হয়ে দর্শনা-গেদে রুটে এই ট্রেন চলাচল করে সপ্তাহে পাঁচ দিন। এরই ধারাবাহিকতায় বেনাপোল-পেট্রাপোল, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি, বিরল-রাধিকাপুর, রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ রুটে ট্রেন যোগাযোগ চালু করা হয়।
বর্তমানে চালু থাকা পাঁচটি রুটের মধ্যে বেনাপোল-পেট্রাপোল, দর্শনা-গেদে রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। একই সঙ্গে চালু পাঁচটি রুট দিয়ে মালবাহী ও পার্সেল।
২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা বন্ধন ট্রেন চালু হয়। বেনাপোল-পেট্রাপোল রুটে সপ্তাহে দুই দিন চলাচল করে এটি। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ওই দিন মালবাহী ট্রেন চালুর মধ্য দিয়ে রুটটি উদ্বোধন করেন। এ রুটে পরের বছরের ২৬ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেনও পরীক্ষামূলক চলাচল করে।
আখাউড়া-আগরতলা ও শাহবাজপুর-মহিষাসন রুট নির্মাণে উভয় দেশ