নিউজ ডেস্ক ঃ দীর্ঘ ৮৮ বছর পর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের খ্যাতনামা আয়া সোফিয়া মসজিদে প্রথমবারের মতো তারাবির নামাজ পড়া হয়েছে।
পবিত্র রমজান মাস শুরু উপলক্ষে তারাবির প্রথম দিন শুক্রবার সেখানে এই আয়োজন করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডেইলি সাবাহ।
রমজানজুড়ে মসজিদটিতে ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। চলবে প্রার্থনা। মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে মসজিদ।
দেড় হাজার বছরের পুরোনো আয়া সোফিয়া একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থোডক্স গির্জা ছিল। পরে তা পরিণত হয় মসজিদে। এর পর একপর্যায়ে ১৯৩৪ সালে এটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়।
সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে তুর্কি আদালত আদেশ দেয়, এটি জাদুঘর নয়। এরপরই দেশটির ইসলামপন্থি সরকার একে মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের পক্ষে আদেশ জারি করে।
করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্য দেশের মতো তুরস্কেও দেয়া হয় নানা নিষেধাজ্ঞা। এরই প্রেক্ষাপটে মসজিদেও কিছু বিধি আরোপ করা হয়।
তবে দেশজুড়ে করোনার টিকাদান কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং শনাক্ত ও মৃত্যুহার কমে আসার পর রমজান উপলক্ষে খুলে দেয়া হয়েছে আয়া সোফিয়া মসজিদ।
বিবিসি জানিয়েছে, ৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দে যখন বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান ইস্তাম্বুলের গোল্ডেন হর্ন নামে এক জায়গায় একটি বিশাল গির্জা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তখনই আয়া সোফিয়ার ইতিহাসের সূচনা।
সে সময় বিশাল গম্বুজের এই গির্জাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা এবং দালান বলে মনে করা হতো। ১২০৪ সালে ক্রুসেডারদের হামলার ঘটনা বাদে কয়েক শতাব্দী ধরে আয়া সোফিয়া বাইজান্টাইনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
অটোমান (ওসমান) বংশীয় সুলতান তৃতীয় মেহমেদ ১৪৫৩ সালে বাইজান্টাইন শাসকদের হাত থেকে ইস্তাম্বুল দখল করে নেন। তার আগ পর্যন্ত শহরটির নাম ছিল কনস্টান্টিনোপল।
ইস্তাম্বুল দখলের পর বিজয়ী মুসলিম বাহিনী প্রথমবারের মতো গির্জার ভেতরে নামাজ আদায় করে। অটোমান শাসকরা এরপর আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করেন। মসজিদের চারপাশে চারটি মিনার তৈরি করেন।
গির্জার সব খ্রিষ্টান প্রতিকৃতি এবং সোনালি মোজাইকগুলো পবিত্র কোরআনের বাণী দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। এর পরের কয়েক শ বছর ধরে হাইয়া আয়া ছিল অটোমান মুসলমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু।
১৯৩৪ সালে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতা চালু করার প্রক্রিয়ায় মসজিদটিকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়।
আয়া সোফিয়া এখন তুরস্কের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান বলে স্বীকৃত। প্রতি বছর ৩৭ লাখ পর্যটক এটি দেখতে আসেন।