স্টাফ রিপোর্টার : পদ্মা তীরের নির্মল বায়ু ও ‘শিক্ষানগরী’ রাজশাহী। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই ঢাকাকে মহানগরী, চট্রগ্রামকে বানিজ্যনগরী এবং রাজশাহীকে শিক্ষানগরী উপাধি দেওয়া হয়। আর এই শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে এক স্কুলের (অধ্যক্ষ) প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে সহকারী শিক্ষিকার সাথে অনৈতিক মেলামেশা কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে । তাদের অনৈতিক এই সর্ম্পকের কারণে ভেঙ্গে পরেছে স্কুলটির শিক্ষা ব্যবস্থা। এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য ইতিপূর্বে কয়েকবার বিতর্ক হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে ও অর্থের বিনিময়ে বারবার পার পেয়ে যায় তারা । আর যে তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে গোটা স্কুলচত্বর এলাকায় তোলপাড় চলছে। তবে প্রধান শিক্ষকের অদৃশ্য ক্ষমতার ভয়ে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে অপরাগতা প্রকাশ করছে অনেকে। এ বিষয়ে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত স্কুলের (অধ্যক্ষ) প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা নিতে গত ১ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, মহানগরীর তালাইমারী মোড়ে অবস্থিত গ্রীনফিল্ড স্কুলটি গত ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে আরআইবিটি শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক কাজ শুরু করেন। সেখানে আর আইবিটি পরিচালক এস এম এমদাদুল হককে স্কুলটির প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ২৭সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখ বিকেল ৪টার সময় একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ খাইরুন্নাহার পপির সাথে স্কুলটির অধ্যক্ষ এস এম এমদাদুল হককে অধ্যক্ষ কক্ষেই তাদের অনৈতিক মেলামেশা কর্মকান্ডগুলো সিসি টিভি ফুটেজ চেক করার সময় দেখে ফেলেন স্কুলের কম্পিউটার অপারেটর/অফিস সহকারী শামীম আহমেদ। এমন বিষয় নিয়ে শামীম আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। উল্টো শামীম আহমেদকে গত ১অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখ আনুমানিক রাত ১১:৪৫ ঘটিকায় সময় স্কুলের অধ্যক্ষ আইবিটি পরিচালক এস.এম. এমদাদুল হক,সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ খাইরুন্নাহার পপি কৌশলে চৌদ্দপাই এলাকায় তার দোলাভাইয়ের বাসায় ডেকে নিয়ে গিয়ে এস.এম. এমদাদুল হক,মোসাঃ খাইরুন্নাহার পপি এবং খাইরুন্নাহার পপির বাসার ভাড়াটিয়া সাহেব বাজার বিশাল বেকারীতে কর্মরত মোঃ সম্রাট মিলে শামীম আহমেদকে লাটিশোঠা দিয়ে বেধরক মারধর করেন। পরবর্তীতে মতিহার থানার পুলিশ জানতে পেরে শামীম আহমেদকে সেখানে থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
নাম প্রকাশ না করার সার্থে গ্রীনফিল্ড স্কুলের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীরা বলেন, অভিযুক্ত গ্রীনফিল্ড স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষিকাই স্কুল ঘরে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেছেন তা না! এর আগেও স্কুলটির অধ্যক্ষ এস এম এমদাদুল হক অনেক মেয়েকে নিয়ে স্কুল ঘরে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেছেন। তাকে বার বার তার এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে ও স্কুল চত্বরের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সেই বিষয়ে সতর্ক করা হলেও তিনি কোন কর্নপাত করেননি। এ কারনে অনেকেই স্কুলের চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ খাইরুন্নাহার পপির সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সে নিজেকে বারবার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
অভিযুক্ত স্কুলের অধ্যক্ষ আইবিটি পরিচালক এস.এম. এমদাদুল হককে অধ্যক্ষ কক্ষেই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ খাইরুন্নাহার পপির সাথে অনৈতিক মেলামেশা কর্মকান্ডগুলো ও সিসি টিভি ফুটেজ এর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,অনৈতিক মেলামেশা হবে কেন ? আমরা স্বামী/স্ত্রী। আর এ গুলো আমাদের পারসোনাল বিষয়। এ বিষয়ে স্কুল চত্বরের আসেপাশের স্থানীয়,রিক্সা চালক থেকে শিল্পপতি পর্যন্ত সকলে জানে। আর আমি আমাদের নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না। আর সিসি টিভিফেুটেজ এর বিষয়ে যে এমন কাজটি করেছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গ্রীনফিল্ড স্কুল আগামী বাংলাদেশের জন্য গতিশীল নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে অক্টোবর ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে। এস এম এমদাদুল হককে প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আরআইবিটি শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির প্রথম চেয়ারম্যান মনোনীত হন মোঃ হুমায়ুন কবির। প্রথম ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল ডিসেম্বর ২০১৭ এ। ক্লাস শুরু হয়েছিল ১০ জানুয়ারী ২০১৮ থেকে প্লে থেকে ঠওও পর্যন্ত ৮৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১১টি বিভাগ নিয়ে। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ড. ১৫ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখে মোঃ হুমায়ুন কবির। বর্তমানে অধ্যক্ষ, সমন্বয়কারী, ১১ জন শিক্ষক, ৫ জন অফিস স্টাফ এবং ২ জন এমএলএসএস এখানে কাজ করছেন। প্লে থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা ভার্সনে (মর্নিং অ্যান্ড ডে শিফট) এবং প্লে থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি ভার্সনে (মর্নিং শিফট) ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। ইংরেজি সংস্করণ (জাতীয় পাঠ্যক্রম) ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল।