পাহাড়-পাথর-জল। একসঙ্গে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা পাওয়া গেছে শুধু সিলেটের বিছনাকান্দিতে। সেখানে যেন পাথরের সুবিশাল এক ‘বিছনা’ (শয্যা) পাতানো। এ মৌসুমের প্রথম পাহাড়ি ঢলের সুবাদে ঠিক সে রকম আরেক ‘বিছনা’ তৈরি হয়েছে।

স্থানটি সিলেটের নতুন পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদা পাথর’ এলাকা। ঢলের পানিতে ভেসে আসা পাথর সংরক্ষণ করায় প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে দৃশ্যমান হয়েছে নতুন পাথরের স্তূপ। নতুন জমা হওয়া পাথর যাতে সুরক্ষিত থাকে, সে জন্য ওই এলাকায় যাতায়াত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দুটি ফাঁড়ি বিশেষ নজরদারির মধ্যে রেখেছে পুরো এলাকা। স্থানীয় প্রশাসনসহ সেখানকার পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশা, করোনাকাল কাটলে নতুন এই পর্যটনকেন্দ্র বাড়তি আয়ের পথ দেখাবে।

‘সাদা পাথর’ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশের একটি এলাকা। সীমান্তের শূন্য রেখার কাছে অবস্থান। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে সেখানে প্রথম পাথর জমা হয়েছিল। কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও মোহাম্মদ আবুল লাইছ পাথরগুলো সংরক্ষণ করেছিলেন। এ নিয়ে ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে ‘ধলাইমুখে আবার জমল ধলাসোনা’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই থেকে এলাকাটি ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।

সিলেটে পাহাড়-নদী-পাথরকেন্দ্রিক প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দির পর সাদা পাথর এলাকা পর্যটকদের কাছে নতুন আকর্ষণ হয়ে ওঠে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের যাতায়াতে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ‘সাদা পাথর পরিবহন’ নামে বিশেষ বাস সার্ভিসও চালু হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে কোনো পর্যটনকেন্দ্রের পর্যটনবাহী পরিবহন চালুর উদ্যোগ সেটিই ছিল প্রথম। প্রতিদিন সেখানে ১০ হাজার পর্যটকের পদচারণ ঘটে। ধলাই নদের ঘাট থেকে সাদা পাথর এলাকায় চলাচল করে দুই শতাধিক নৌকা। করোনা পরিস্থিতিতে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য জানিয়েছেন, ২৬ মে থেকে টানা তিন দিন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নেমেছিল। বৃষ্টি থামার এক দিন পর সাদা পাথর এলাকায় নতুন করে পাথর জমা হওয়ার খবর আসে। ওই দিনই একদল পরিদর্শক পাঠিয়ে নতুন পাথরের স্তূপ চিহ্নিত করা হয়।

কোম্পানীগঞ্জের ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা সুজন সাহা জায়গার প্রাথমিক মাপজোখ করে রেখেছেন। তিনি জানান, পাহাড়ি ঢলে এভাবে প্রতিবছর পাথর জমা হয় না। আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, সেখানে প্রথম ১৯৯০ সালে পাথর জমা হয়েছিল। সেই বছর সব পাথর লুট হয়েছিল। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০১৭ সালে পাথর জমা হলে তখন লুটপাট ঠেকানোর দাবি তোলেন স্থানীয় লোকজন। সংরক্ষণ করার পর পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে এলাকাটি। এবার তৃতীয় দফায় পাথর জমা হওয়ার পরপরই প্রশাসনের তাৎক্ষণিক নজরদারিতে দৃশ্যমান হয়েছে নতুন পাথর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে