নিজস্ব প্রতিবেদক: সূর্যের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সকাল ৮টা থেকে অফিস শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। নির্দেশনার দুই সপ্তাহ পরও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কর্মকর্তাদের সকাল সকাল ঘুম ভাঙে না। তাঁরা অফিসে আসেন দেরিতে। সোমবার বরেন্দ্র ভবন থেকে এ দৃশ্যই সরাসরি সম্প্রচার লাইভ করছিল বেসরকারি সংবাদভিত্তিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ। এ কারণে চ্যানেলটির দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হামলার সময় এটিএন নিউজের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ভান্ডার রক্ষক মো. জীবন এবং গাড়িচালক আবদুস সবুর। এদের মধ্যে জীবন বিএমডিএ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। বিএমডিএ সচিব শরিফ আহমেদ আজ সোমবার দুপুরে এক অফিস আদেশে এ দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
আজকের পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
জানা গেছে, অফিস শুরুর সময় সকাল ৮টা হলেও ২০ মিনিট পরে আসেন বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ। সে সময় এটিএন নিউজের লাইভ চলছিল। আবদুর রশীদ এসেই এটিএন নিউজের সাংবাদিকদের বলেন, ‘কার অনুমতি নিয়ে এখানে ভিডিও করা হচ্ছে?’ এটিএন নিউজে লাইভ চলাকালেই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
এরপর জীবনসহ অন্য কর্মচারীরা লাইভ চলাকালেই সাংবাদিক বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপারসন রুবেলকে মারধর শুরু করেন। মারতে মারতে তাঁদের বরেন্দ্র ভবন থেকে মূল রাস্তায় বের করা হয়। ক্যামেরা ও বুম কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। এই হামলায় ১৫ থেকে ১৭ জন কর্মচারী অংশ নেন। ক্যামেরা ভেঙে ফেলায় একপর্যায়ে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুই সাংবাদিক চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান। ক্যামেরাপারসন রুবেল এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর একটি কান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হামলার ঘটনায় সাংবাদিকদের অবস্থান
হামলার ঘটনায় সাংবাদিকদের অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে বরেন্দ্র ভবনের সামনে যান রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকেরা। তাঁরা দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত করার দাবি জানান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান এলে তাঁর কাছেও এ দাবি জানানো হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকেরা ফিরবেন না বলে জানিয়ে দেন। দুপুরে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান একটি কাগজ হাতে নিচে নেমে আসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘প্রধান কার্যালয়ের ভান্ডার রক্ষক মো. জীবনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রিজিয়ন এবং গাড়িচালক আবদুস সবুরকে নওগাঁ রিজিয়নে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে।’
তবে এই বদলি আদেশে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সাংবাদিকেরা। রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, নির্বাহী সদস্য বদরুল হাসান লিটন ও শরীফ সুমন জানিয়ে দেন দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। অবশেষে বিএমডিএ এ দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এ হামলায় বিএমডিএর আরও অনেকে জড়িত ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের শনাক্ত করা না যাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
বিএমডিএতে লাইভে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ক্যামেরা ভাঙচুরবিএমডিএতে লাইভে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ক্যামেরা ভাঙচুর
ঘটনাটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার পর তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন। সে মোতাবেক দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাঁদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাঁরা নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারেন না। তদন্ত প্রতিবেদন প্রতিবেদন আসার পর সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।’