পাভেল ইসলাম, মিমুল স্টাফ রিপোর্টার:
রাজশাহীর পুঠিয়ায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাই টিভির নাম ভাঙিয়ে দ্বিতীয় দফায় চাঁদার টাকা গ্রহণকালে এলাকাবাসীর হাতে আটক হয়ে থানা পুলিশের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বুলবুল খাঁন নামের এক ভুয়া সাংবাদিককে।
এসময় তার কাছ থেকে ভুয়া মাই টিভির আইডি কার্ড একটি নীল কালারের পালসার মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে পুঠিয়া উপজেলার বিলমাড়িয়া আদিবাসী পল্লী এলাকায় চাঁদাবাজির করার আটকের ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জানুযারি) বিকেলে মাই টিভি’র রাজশাহী প্রতিনিধি শাহরিয়ার অনতু পুঠিয়া থানায় হাজির হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে এই মামলায় বুলবুলের অপর এক সহযোগীকে আসামী করা হয়েছে। বর্তমানে সে পলাতক রয়েছে। তকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে নিশ্চিত করছেন,পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুর রহমান।
স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়,পুঠিয়ার বেলমারিয়া এলাকার আদিবাসী পল্লীতে তিন যুবক সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঢুকে তাদের কয়েকজনকে ভয় ভীতি দেখিয়ে গত এক সপ্তাহ আগে উক্ত এলাকা থেকে টাকা হাতে নিয়ে চলে যায় ভুয়া ওই নামধারী সাংবাদিকরা। আবারো গতকাল মঙ্গলবার রাতে টাকা নেয়ার উদ্দেশ্যে আদিবাসী পল্লীতে ঢুকে তাদের অনেকের কাছে বিভিন্ন ভাবে টাকা দাবি করতে থাকে। পাশাপাশি আদিবাসীদের প্রলোভন দেখায় তাদেরকে দেশীয় চোলাই মদ বিক্রি করার লাইসেন্স করে দিবে বলে। পরে টাকাও দাবি করে তাদের কাছ থেকে।
বিষয়টি সন্দেহ হলে স্থানীয় মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানায় ভুক্তভোগী ওই পরিবারগুলো। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন এসে তাদের আটক করে জানতে চায় তারা কোথায় সাংবাদিকতা করে।
এ সময় দুজন পালিয়ে গেলেও সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ গুনগাতি বাগান বাড়ি এলাকায় কফিল উদ্দিনের ছেলে ভূয়া সাংবাদিক বুলবুলকে আটক করে এলাকাবাসী।
পরে পুলিশ এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায় সে মাই টিভির সাথে কোনোভাবেই জড়িত নয়।
আরো জানা যায়,আটক বুলবুল খান সে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি আর এখানে থাকেন না। বুলবুল সিরাজগঞ্জ হারবাল ওষুধের ব্যবসা করতেন বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার রাতে বিলমাড়িয়া আদিবাসী পল্লীর নগেন হাজদা’র ছেলে নরেন হাজদা,কমল মাড্ডি’র ছেলে রনজিৎ মাড্ডি’র কাছ থেকে ১ হাজার করে এবং অপর জন সরকার মুর্মু’র ছেলে নয়ন মুর্মু এর কাছ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা জোরপূর্ব চাঁদা নেয়া হয়।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী নরেন হাজদা বলেন,গত সপ্তাহে এসে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে। গতকাল রাতে আবার এসেছে টাকা নিতে,টাকা না দিলে আমাকে হ্যান্ডক্রাফ পরিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিবে বলে ভয় দেখায়।
আরেকজন ভুক্তভোগী রনজিৎ মাড্ডি বলেন,রাতের বেলা ওরা তিনজন এসে আমাকে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে মদের লাইসেন্স করে দেবে বলে ৩ হাজার টাকা করে টাকা চাচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ কিভাবে টাকা দিব। পরে আমি মেম্বার সহ স্থানীয় লোকদেরকে জানাই।
নয়ন মুর্মু বলেন,তারা আমার ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েছিল আমি ভয়ে ৫শ টাকা দিয়েছিলাম। আমাকে ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাই টাকা দিয়েছি।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সাধারণ সদস্য মেম্বার সান্টু ইসলাম বলেন,আমার কাছে ওই আদিবাসী পল্লীর কিছু লোকজন জানিয়েছিল সাংবাদিক নাম করে কয়েকজন এসে টাকা নিয়ে যায়। গত রাতে আবার শুনি ভুয়া কিছু সাংবাদিক এসে আদিবাসীদের ভয় দেখিয়ে টাকা চাচ্ছিল। সে সময় সন্দেহ হলে এলাকাবাসী ধরে আটক করে। পরে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে কথা বলে জানতে পারলাম যে তারা আসলে মাই টিভির কোন সাংবাদিক নয়। পুলিশ এসে তাদেরকে নিয়ে চলে গেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহীর দায়েত্ব থাকা মাই টিভির সাংবাদিক শাহরিয়ার অনতু বলেন,রাজশাহীতে আমি মাই টিভির সাংবাদিক। সে ব্যক্তি ভুয়া কার্ড বের করে দেখিয়েছে আর এলাকাবাসীর কাছে চাঁদা দাবি করেছে। তাই তাকে এলাকাবাসী ধরে পুলিশে দিয়েছে। আজ সকালে আমি পুঠিয়া থানায় হাজির হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছি।