নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আউট সোর্সিং এ অস্থায়ী জনবল নিয়োগে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চুক্তিভিত্তিক কর্মরত করোনাকালীন সম্মুখ যোদ্ধারা। অনেকটা বুকবাঁধা সপ্ন নিয়ে অতি অল্প বেতনেও দিনরাত কাজ করেই চলেছেন তারা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্তারা তাদের একবুক আশা বাধতে নিরাশ করেননি কখনো। কিন্তু হুট করেই তাদের এক বুকবাঁধা সপ্ন গুড়েবালি। তাদের কর্মস্থলে আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে ১২ জন অস্থায়ী জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।তারা কেও আগে এই কাজগুলোর সাথে জড়িত না,নেই অভিজ্ঞতা ও সেচ্ছাশ্রম। যার অনুমোদন দিয়েছেন রাজশাহী সিভিল সার্জন ডাঃ আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক।
গত (৬ এপ্রিল) সিভিল সার্জন সাক্ষরিত বিএসএস সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের এক ম্যান পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির নিজস্ব প্যাডে এই অনুমোদন দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে অস্থায়ী ভিত্তিক আউট সোর্সিং মাধ্যম নিয়োগপ্রাপ্তরা আসেন মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মস্থলে যোগদান করতে। এসময় তারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) ডা. আরিফুল কবীরের কাছে গিয়ে যোগদানের কথা বলেন। নিয়োগের বিষয়টি তিনি আগে থেকে অবগত ছিলেননা। খবর পেয়ে টিএইচএ স্থানীয় সংসদ সদস্য এর সাথে কথা বলেন।পরে সাংসদ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীরকে যোগদান স্থগিতের নির্দেশ দেন। রবিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর।
এসময় তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। তাদেরকে বিভিন্ন খাত ও টিকিট বিক্রির টাকা থেকে সামান্য কিছু নামমাত্র বেতন দেয়া হয়। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে তারা নিরলস ভাবে সাহস নিয়ে কাজ করে গেছেন। তারা অনেকটা আশা নিয়েই দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরেছেন। আমরাও তাদেরকে কখনো নিরাশ করিনি। কিন্তু হুট করে আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেয়ায় তাদের আশা নিরাশার পরিনত হয়েছে। তবে আমরা কর্মরতদের মধ্যে অন্তত ২/৩ জনকে আউট সোর্সিং-এ নেয়ার জন্য বলেছি।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সিভিল সার্জনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। সাংসদ আমাদের জানিয়েছেন, যারা আগে থেকে কাজ করছেন তাদেরকে আউট সোর্সিং এর আওতায় নেয়া হোক অথবা তাদেরকে কর্মস্থলে রেখে বাকি জনবল নিয়োগ দেয়া হোক।
স্থানীয় রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এমপি বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় দুইটি পবা ও মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে এ-দুই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল সংকট রয়েছে। যার কারনে আমরা স্থানীয় কিছু লোক নিয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করাচ্ছি। করোনাকালীন সময়েও তারা দিনরাত কাজ করে গেছেন। এখন হুট করে তাদেরকে বাদ দিয়ে আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে অস্থায়ী মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১২ জন ও পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৪ জন করে মোট ২৬ জন জনবল নিয়োগ দেয়ায় আমরা বিব্রত। একারণে এই দু-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আউট সোর্সিং এর ২৬ জনবলের যোগদান আপাতত বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, জনবল নিয়োগ হলে আগে থেকে স্থানীয় যারা কাজ করছেন তাদেরকে আগে নিয়োগ দিতে হবে। সেটা আউট সোর্সিং মাধ্যমে হতে পারে অথবা যে মাধ্যমেই হোক। তাদের মূল্যায়ন আগে করতে হবে। তারপর বাকিদের যোগদানে আমাদের আপত্তি নেই। এবিষয়ে সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে।
কর্মরতদের আউট সোর্সিং এর আওতায় নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে কি না? জানতে চাইলে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, জনবল নিয়োগের বিষয়টি ঠিকাদাররা দেখছেন। কর্মরতদের আপাতত আউট সোর্সিং এর আওতায় নেয়ার সুযোগ নেই। তবে আগামী দিনে কেউ চাকরি ছাড়লে বা কোন কারনে পদগুলো শুন্য হলে আমি তাদের হয়ে সুপারিশ করবো।
এদিকে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী ওয়ার্ড বয় রাসেল হোসেন আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা এতোদিন নাম মাত্র বেতনে কাজ করে গেছি। করোনাকালীন সময়ে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত রোগিদের সেবা করে গেছি। এখন আমাদের বাদ দিয়ে দিলে আমরা কোথায় যাবো। কি করে জীবিকা নির্বাহ করবো। আমাদের বাদ দিয়ে আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমাদেরকে আউট সোর্সিং এর আওতায় নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিলে আমরা দুবেলা ডাল-ভাত খেয়ে জীবন পরিচালনা করবো।