টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের ইউপি সচিব বিরুদ্ধে জন্ম নিবন্ধন, নাম, বয়স সংশোধনী সনদ প্রদান সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। সচিবের এমন বাণিজ্য নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আপামর সাধারণ মানুষের কথা ভেবে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন কোন ইউপি চেয়ারম্যান অথবা ইউপি সচিব জন্ম নিবন্ধন, নাম, বয়স সংশোধনী সনদ প্রদান ও অনলাইন করণে বাড়তি টাকা আদায় করলে তার চাকুরী থাকবে না। এমন ঘোষণাকে তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও পরিষদে হাজিরা না দিয়ে দিনের পর দিন কাজ করে যাচ্ছেন ফলদা ইউনিয়ন সচিব সামাউন কবির।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়ে, সরকার নির্ধারিত নিয়মে শিশু জন্ম থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধনে কোন ফি লাগে না। তবে শিশুর বয়স ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা ও ৫ বছরের অধিক হলে ৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই নির্ধারিত ফি না নিয়ে প্রতি জন্ম নিবন্ধনে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায়ের অভিযোগ স্থানীয় ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর। অপরদিকে জন্ম নিবন্ধনের নাম, বয়স সংশোধনী, অনলাইন সনদ করতে ২৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। জন্ম নিবন্ধন করতে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী সঙ্গে আলাচারিতায় জানা যায় জন্ম নিবন্ধন আনতে গেলে কাগজে বিভিন্ন ভুল ধরে সংশোধনের কথা বলে বাড়তি টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ১ মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ঘুরিয়েছেন।
পরিষদে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ৬মাস ঘুরে মাত্র ৩দিন পরিষদে উপস্থিত ঝনঝনিয়া গ্রামের মনোয়ারা বেগম। এমতাবস্থায় এক পর্যায়ে তার কাছে ১৫০০ টাকা নিয়ে আমার কাজ করে দিয়েছে। এমন অভিযোগ গ্রামের অধিকাংশ এলাকাবাসীর। এমন চিত্র শুধু পরিষদের বারান্দায় সীমাবদ্ধ নহে। পুরো ইউনিয়ন ঘুরে এমন অর্ধশত অভিযোগ আমাদের হাতে এসেছে। সবার ঠিকানা ভিন্ন হলেও গল্প এক। সবাইকে প্রথমে কিছুদিন ঘুরিয়েছেন এবং পরে কিছু বাড়তি টাকা দিতে বাধ্য করে সচিব অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকেন।
এমন ঘটনার সাক্ষী কল্পনা খাতুন বলেন, আমার আর আমার স্বামী জন্ম নিবন্ধনের জন্য গেলে আমাকে কাগজ না করে দিয়ে শুধু ঘুরিয়েছে। টাকা না দিলে সে কাজ করে দেয় না। পরে আমরা দুজন ১১০০ টাকা দিলে সে আমাদের নিবন্ধন করে দেয়।
অপরদিকে রমিজুল ইসলাম খান রঞ্জু নামে একজন জানান, আমার এক জরুরী কাজে নিবন্ধন করতে গেলে তাকে ৫০০ টাকা অগ্রিম দিতে হয় এবং সে জানায় এই কাগজ তার বাসা এলেঙ্গা থেকে নিয়ে আসতে হবে। পরে তার বাসায় ২দিন গিয়ে আরো ২০০ টাকা দিয়ে আনতে হয়। অপরদিকে আমার ছেলের জন্য নিবন্ধন আনতে গেলে সে সর্বমোট ৭০০ টাকা চেয়েছে। এই বিষয়ে আমি চেয়ারম্যানের নিকট একটি অভিযোগ দায়ে করেছি।
সরেজমিনে ঘুরতে গিয়ে আরো জানা যায় ইউনিয়নের মোবারক মাহবুব উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শতাধিক শিক্ষার্থীর নিবন্ধন জটিলতার কারণে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে না। এই বিষয়ে বিদ্যালয় প্রধানশিক্ষক মোঃ আসাদুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শতাধিক শিক্ষার্থীর নিবন্ধন জটিলতায় রেজিস্ট্রেশন করাতে পারছি না। এদিকে রেজিস্ট্রেশনের প্রথম ধাপের তারিখ চলে গেলেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। সচিবকে জানালে সে বার বার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নাম, জন্মতারিখ এসব ভুল বলে হয়রানি করছে।
অপরদিকে তার এসবের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ বা নায্য কথা বললেও হতে হয় তাকে হেনস্তা। তার ব্যক্তিগত কিছু চক্রদিয়ে তাদেরকে হেনস্তাসহ হুমকী দিয়ে থাকেন। এই বিষয়ে গত ০৮ মে খাজা নূর মোহাম্মদ নামের একজন ভুক্তভোগী ভূঞাপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ইউপি বিকল্প উদ্যোক্তা তাইজুল ইসলাম বলেন, সে সকল কাগজ অফিসের নিয়মের বাইরে গিয়ে ১ দিন এসে নিজের বাসায় নিয়ে যান। আর পরে একদিন এসে সেগুলো বিতরণ করেন। সপ্তাহে অফিস করে মাত্র ২ দিন। তাকে কিছু বললে সে কাউকে তোয়াক্কা করেন না। এই বাসায় নেয়ার কারণে কিছু কাগজ হারিয়ে গেলে সেটি উদ্ধার সম্ভব না হলে পুনরায় ভুক্তভোগীকে আবেদন করতে বলে। আরো জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে টিকাদান কর্মসূচী থেকে নামের ভলিউম বই দেখে নিজেই প্রায় ১২০০ লোকের নিবন্ধন করে রাখেন। এতে মনগড়া বানান ও তথ্য ঘাটতি রেখে নিবন্ধন করে রাখায় দৈনিন্দিন ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে এলাকাবাসী। এসব ভুল বানান ও তথ্য পূরণ করতে আবার আবেদন করতে হয় ও প্রতি নিবন্ধনে সর্বমোট প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
তার কাছে থেকে রেহাই পাননি পরিষদের মেম্বার প্রতিনিধিরাও। তাদেরকেও পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি ও দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। টাকা না দিলে কোনভাবেই মিলছে না কোন সুবিধা এমনটাই জানিয়েছেন ১নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার মোঃ চানু মিয়া।
এই বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো: সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্ম নিবন্ধন বিষয়ে কড়া সতর্কতার পরেও সে নিয়মিত অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে আমার ইউনিয়নবাসীর থেকে। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমার কাছে পরিষদের মেম্বারসহ ইউনিয়নবাসী এই বিষয়ে অভিযোগ জানালে আমি সতর্ক করতে গেলে সে আমার কথার কর্ণপাত করেন না। এমনকি তাকে এলাকাবাসী কেউ কিছু বললে বিভিন্ন হুমকী প্রদর্শন করেন। তার এমন আচরণে আমার এলকাবাসী জন্ম নিবন্ধনে চরম বিপাকে। এই বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একাধিকবার মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কিন্তু সে বার বার বলেছেন দেখবেন বিষয়টি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: ইশরাত জাহান বলেন, ইউপি সচিব চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে তদন্তপূর্বক জানা যাবে বিষয়টি।