
নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাবে রাজশাহীর চারঘাটে ঐতিহ্যবাহী খয়ের শিল্প বিলুপ্তির পথে।
যে কারণে এ পেশার সাথে জড়িত প্রায় ২লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়ায় অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বর্তমানে এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে ২হাজারের মত।
আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে।
তবে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় একটি সংগঠনের কর্মীরা রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলাধীন রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের দু’পাশ দিয়ে প্রায় ২কিলোমিটার জায়গায় খয়ের গাছের চারা রোপন করেছে। ইতিমধ্যেই এসব গাছের বয়স প্রায় দুই বছর হতে চলেছে।
সূত্রমতে, খয়েরের বৈজ্ঞানিক নাম ‘একাচিয়া ক্যাটেচু’। খয়ের শিল্পের কাচাঁমাল খয়ের গাছ। দেশে খয়েরের মোট চাহিদার শতকরা ৯০ভাগই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা থেকে পূরণ করা হয়। তবে চারঘাট ছাড়াও দিনাজপুর, ঘোড়াঘাট, রংপুরের ভুাংঙ্গামারী, ঈশ্বরদী, পাবনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে খয়ের গাছ উৎপন্ন হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মুন্সি নূরম্নল হক ও তাহের উদ্দিন প্রামানিকের উদ্যোগে ১৯৫২সালে রাজশাহীর চারঘাটে খয়ের শিল্পের যাত্রা শুরম্ন হয়। এরপর পঞ্চাশের দশকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত বিহারিদের মাধ্যমে এই শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসার ঘটে। সেসময় স্থানীয় ব্যাক্তিরা ব্যাপকভাবে এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
ভোজন প্রিয় বাঙ্গালীর খাবারের সীমাবদ্ধতা নেই। দৈনন্দিন তিন বেলা খাবারের পরে অনেকেই অভ্যাসগত কারণে কিংবা শখের বসে পান খেয়ে থাকেন। আর এ পানকে সুস্বাদু করতে নানান ধরনের মশলার সংমিশ্রন করা হয়। এরমধ্যে খয়ের হল অন্যতম উপাদান। খয়ের কেবল ঠোঁট লাল করার কাজই ব্যবহার হয় না এর ব্যবহার বহুবিদ। ওষুধ, জর্দ্দার রং, কেমিক্যাল প্রভৃতি তৈরী করতেও খয়ের ব্যবহার করা হয়।
তবে খয়ের কিভাবে তৈরী হয় ? খয়েরের ইতিহাসই বা কী ? এ নিয়েও রয়েছে নানান কৌতুহল।
জানাগেছে, ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ভারত থেকে খয়ের গাছের চারা নিয়ে এসে চারঘাটের বিভিন্ন অঞ্চলে লাগান হত। খয়ের গাছ দেখতে কিছুটা বাবলা গাছের মত। ১৫বছর বয়সি গাছ খয়ের উৎপাদনের জন্য উপযোগী হয়। খয়ের গাছের উপরের সাদা অংশ তুলে ফেলে ভেতরের লাল বর্ণেও শাস কুচি কুচি করে কেটে তা মাটির পাতিলে বিশেষ নিয়মে তাপ দিতে হয়। সেই তাপে লাল বর্ণের শাস থেকে লাল রস বের হয়। এই রস গাঢ় হলে তা পাতিলে ঢেলে রাখা হয়। আর এই অবস্থাকে বলা হয় লালি খয়ের। লালি খয়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শক্ত খাটি খয়ের এ রম্নপ নেয়।
আরো জানাগেছে, কেবল রাজশাহী জেলার চারঘাট থানাতেই তৈরী হত। বৃহত্তর রাজশাহী জেলার পুঠিয়া, লালপুর, নাটোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই খয়ের গাছ পাওয়া যায়। সেখান থেকে খয়ের চাষীরা গরুর গাড়ি অথবা অন্য যানবাহনে করে চারঘাটে এসে বিক্রয় করত। এক গরুর গাড়ি খয়ের কাঠের দাম ১হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হত। লালি খয়ের বিক্রয় হয় ২হাজার ৪শ’ থেকে ৬হাজার টাকা মণ দরে।
অথচ, ঐতিহ্যবাহী এই গাছ লাগানোর জন্য সরকারীভাবে তেমন কোন উদ্যোগ লড়্গ্য করা যায়না। এছাড়াও যে পরিমান গাছ রয়েছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে কেটে ফেলায় খয়ের বাগান দিনে দিনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নতুন ভাবে খয়ের গাছের উৎপাদন শুরম্ন করা না হলে এক সময় ধ্বংসের মুখে পড়বে এই খয়ের শিল্প।