বাগমারায় এমপি এনামুলের ছত্রছায়ায় জোর করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা এলাকায়, এক অসহায় ব্যাক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর এবং জোর করে ডিস ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়ে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে এমপি এনামুল হকের ভাগনি জামাই শাহ রেজা আলম ওরফে ইমন ও স্হানীয় কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধান ও খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম রাজু সরকারী সকল নিয়ম মেনে, বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা এলাকার স্হানীয় ফিরোজ আহমেদ নামের এক সাংবাদিকের নিকট থেকে ২০১০ সালের আগস্টের ৬ তারিখে তার ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। তারপর তাহেরপুর এলাকার বিমল ক্যাবল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে প্রায় এক যুগ সেখানে ব্যবসাও করেন রাজু। ২০২১ সালে বাগমারার এমপি এনামুল হকের ভাসতি জামাই ইমন, রনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডিস লাইন কেটে দিয়ে, মেশিন চুরি করে হয়রানি শুরু করে। এক পর্যায়ে চাঁদা দাবি করা শুরু করে। প্রাণ ভয়ে ভুক্তভোগী রাজু চাঁদাও দিতেন তাদের। পরে এক পর্যায়ে ওই বছরই রাজু, স্ত্রী ফাহিমা খাতুন ও তার দুই সন্তানকে দিনের আলোয় ইমন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোটা দিয়ে ব্যাপক মারধর করে। পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিমল কেবল নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে উপজেলার ভবানীগঞ্জ নিহা কেবল নেটওয়ার্কে লাইন সংযোগ দিয়ে জোরপূর্বক শুরু করা হয় ডিস ব্যবসা। আর ভুক্তভোগী পরিবার বিচার পেতে দ্বারস্থ হয় এমপি এনামুল হকের নিকট। ১৪/১১/২০২১ তারিখে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবর। এরপর লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয় ১১/৫/২০২২ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর। এছাড়াও ডিস লাইনের সরঞ্জাম ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে ওই একই বছরের জুলাই মাসের ৭ তারিখে অভিযোগ করা হয় বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর। পরে কোথাও বিচার না পেয়ে মারধর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফিরে পেতে এসব বিষয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন রাজশাহী কোর্টে, যার মামলা নং এফ.আই.আর নং ১৮/২০২১ (বাগমারা)। বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম রাজু মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। সংসার চালাতে রাজুর স্ত্রী ফাহিমা খাতুন চার হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করছেন এক যায়গায়। আর বড় ছেলে কোম্পানির চাকরি নিয়ে ঘুরছেন দেশের অন্য প্রান্তে। পড়াশোনা প্রায় বন্ধের দিকে ছোট ছেলে সোহানের।

অনুসন্ধানে। আরো জানা যায়, মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে জবর দখল করা ওই ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন ইমন, রনি, ও বাঁধন তিনজন মিলে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। আর দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে আরিফ। আর এভাবেই ওই এলাকায় তৈরি করে রেখেছে ত্রাসের রাজত্ব। এদের মধ্যে আরেক অভিযুক্ত কোনো কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলাও। এসব বিষয় জানতে সরেজমিনে সেখানে মানুষের সাথে কথা বলতে চাইলে সাধারণ মানুষরা এদের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে চাইনি। পরে ছদ্মবেশে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয় এলাকাবাসীর বক্তব্য। এলাকাবাসীর সবাই ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে না চাইলেও তাদের ভিতরে ব্যাপক ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। আর ঘটনার সত্যতাও স্বীকার করেছেন সবাই। এসব ছাড়াও এলাকাবাসীর রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। যদিও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী রাজুর স্ত্রী ফাহিমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ডিস ব্যবসা ওরা কেড়ে নিছে। আমাকে, আমার স্বামীকে, আমার দুইসন্তানকে কুপিয়ে জখম, আরো বিভিন্ন ভাবে চড়মভাবে আমাদের সবাইকে মারধর করে। আমার স্বামী এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এমপি এনামুল হকের কাছে গিয়েছিলাম, সে বলেছিল তোমরা রাজশাহীর বাসিন্দা রাজশাহীতে গিয়ে ব্যবসা করো। এখানে ব্যবসা করার দরকার নেই। এমপি কোন রকম সাহায্য করেনি। পরে ইউএনও স্যারের কাছেও অভিযোগ দিয়েছি। কোনো ফল পাইনি। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। বাসায় খাবার-দাবারেরও সমস্যা চলছে। আপনারা আমাদের বাঁচার সুযোগ করে দিন।

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে একাধিক ব্যক্তি ও সাইফুল সরদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, রাজুর বাড়ি রাজশাহীতে। তবে সে এখানে বিয়ে করে। রাজু এখানে বহুদিন ধরে রাজু ডিসের ব্যবস্যা করে। এখানকার ইমনেরা কয়েকজন তাদের তাড়িয়ে দিয়ে নিজেরা দখল করে নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ১৪ নং হামিরকুৎসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন তিনি বলেন, ঘটনা সত্য। সেসময় মারামারি হয়েছিল। রাজুর স্ত্রীকেঐ মারধর করা হয়। তবে ওই ডিস ব্যবসা রাজুরই।

এবিষয়ে মূল অভিযুক্ত ইমন সব অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, ওরা সব জেএমবি। ওদের সাথে আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা। আর এসব বিষয়ে মামলা হয়েছে, আমি মামলার মাধ্যমে মোকাবেলা করবো।

এবিষয়ে আরেক অভিযুক্ত বাঁধন নামের তিনি বলেন, ওদের সাথে আমি আর নাই। মারামারির ওই স্হানে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। কাউকে মারধর করিনি। ডিস ব্যবসায়ী রাজু ভালো সার্ভিস দিতে না পারায় এলাকাবাসীর সাথে মারামারি করে শহরে পালিয়ে যায়। আমরা তাদের তাড়িয়ে দেইনি।

এই বিষয়ে সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) রাজশাহী তিনি বলেন, দোষীদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে  কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Related Posts

বাঘার ঐতিহ্যবাহী মেলার ইজারা পেলেন যুবদল নেতা শফি

এম ইসলাম দিলদার, বাঘা প্রতিনিধিঃরাজশাহীর বাঘায় ইদুল-ফিতরের ঐতিহ্যবাহী ঈদমেলার ইজারার ডাক সম্পন্ন হয়েছে। এ বার সর্বোচ্চ ১২ লক্ষ টাকা ইজারার জন্য ডাক উঠেছে ঐতিহ্যবাহী মেলাটির। রবিবার ( ২৩ মার্চ)দুপুরে বাঘা…

সোনালী ব্যাংক পিএলসি জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ইফতার বিতরণ

পাভেল ইসলাম মিমুল স্টাফ রিপোর্টার  রমজান মাস মানেই সংযম,সহানুভূতি ও ইবাদতের সময়। এ সময় ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল মুসলমান একসঙ্গে রোজা পালন করেন এবং ইফতার ভাগাভাগি করেন। আর এই মহিমান্বিত সময়কে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

জাহানাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাকে দেখতে মোহনপুরে আবু সাঈদ চাঁদ

  • By admin
  • March 23, 2025
  • 3 views
জাহানাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাকে দেখতে মোহনপুরে আবু সাঈদ চাঁদ

বাঘার ঐতিহ্যবাহী মেলার ইজারা পেলেন যুবদল নেতা শফি

  • By admin
  • March 23, 2025
  • 77 views
বাঘার ঐতিহ্যবাহী মেলার ইজারা পেলেন যুবদল নেতা শফি

সোনালী ব্যাংক পিএলসি জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ইফতার বিতরণ

  • By admin
  • March 23, 2025
  • 4 views
সোনালী ব্যাংক পিএলসি জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ইফতার বিতরণ

চারঘাটে বাসাস ও চারঘাট প্রেস ক্লাবের উদ্যোগ ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

  • By admin
  • March 22, 2025
  • 42 views
চারঘাটে বাসাস ও চারঘাট প্রেস ক্লাবের উদ্যোগ ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

রাজশাহী মহানগর শাহমখদুম থানা বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

  • By admin
  • March 21, 2025
  • 45 views
রাজশাহী মহানগর শাহমখদুম থানা বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

রাজশাহী জেলা ও রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ বাঘা থানার এএসআই আঃমালেক

  • By admin
  • March 21, 2025
  • 196 views
রাজশাহী জেলা ও রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ বাঘা থানার এএসআই আঃমালেক