নিউজ ডেস্কঃ অর্থনৈতিক সংকটে সৃষ্ট অস্থিরতার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা; দাবি উঠেছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের। তবে সে পথে হাঁটবেন না তিনি। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মোটেই পদত্যাগ নয়।

পার্লামেন্টে বুধবার সরকারের হুইপ জনস্টন ফার্নান্দো এই ঘোষণা দেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

বেশ কিছুদিন ধরে দেশটিতে অস্থিরতা চলছে। বিরোধী দলসহ নানা পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। সব মিলিয়ে কঠোর সময় পার করছে শ্রীলঙ্কা।

মুখ্য সরকারের হুইপ জনস্টন ফার্নান্দো বলেছেন, ‘দায়িত্ববান সরকার হিসেবে, যেকোনো পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন না।’

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রাস্তায় আন্দোলন করছে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে দেশটির পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেছে। পুনরায় নিয়োগ পাওয়া চার মন্ত্রীর মধ্যে অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আলি সাবরিও এক দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন।

চলমান সংকটের মধ্যেই নরওয়ে, ইরাক ও অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে দেশটির এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানা যায়নি।

অন্তত ৪১ জন আইনপ্রণেতা জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতাসীন জোট।

সোমবার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের একটি ঐক্য সরকারে যোগদানের আমন্ত্রণকে অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখান করেছে বিরোধীরা। এর পরিবর্তে দেশের খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির জন্য সরকারের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে তারা।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরাজের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র। তীব্র আন্দোলন সামাল দিতে একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। এর আগে দেশজুড়ে জারি হয় কারফিউ।

দুই কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন। আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি দেশটির এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।

এতে লঙ্কান সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনশিল্প ধসে পড়েছে, রেমিট্যান্স পৌঁছেছে তলানিতে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ নেমে এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারে।

বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে জ্বালানি আমদানি কমে যাওয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ এই সংকটে পড়েছে দেশ। দিনের অর্ধেক বা এর বেশি সময় চলছে লোডশেডিং; খাবার, ওষুধ এবং জ্বালানি সংকটে ক্ষোভ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

গত কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বেশ টালমাটাল ছিল। এই অবস্থায় দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। ২০২০ সালে শুরুর দুই মাসে রিজার্ভ ৭০ শতাংশ কমে যায়।

ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারে! শুধু তা-ই না, বছরের বাকি সময়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারকে।

প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ মেটানোর জন্য রিজার্ভের ডলার বাঁচাতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় শ্রীলঙ্কা সরকার। এরপর থেকেই দেশটিতে সংকট বাড়তে থাকে।

এসব সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিকে দায়ী করছেন বিক্ষোভকারীরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে