
পঞ্চগড় প্রতিনিধি: কালভার্টের মুখে অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করায় নিষ্কাশন হচ্ছেনা পানি। ফলে কয়েকদিনের ভারি বর্ষনে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ঘরের মেঝে পর্যন্ত পানি ওঠায় পানিবন্দি হয়ে বিপাকে পড়েছে অন্তত ৫০টি পরিবার। ফলে চলাফেরাসহ খাবার সঙ্কটে পড়েছে ভুক্তভোগিরা।
মঙ্গলবার বিকেলে পঞ্চগড় পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের উত্তর জালাসী এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এমন দুর্ভোগের চিত্র।এর বাইরেও পৌরসভা এলাকার কামাতপাড়া, তুলার ডাঙ্গা, নিমনগর খালপাড়া, হঠাৎপাড়া, পুরানা ক্যাম্পসহ নদী সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
উত্তর জালাসী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য কালভার্ট রয়েছে। সেখান দিয়েই প্রতিবছর পানি চলে যায়। কিন্তু এ বছর কালভার্টের মুখের জমিতে অবকাঠামো নির্মাণ করায় পানি আবদ্ধ হয়ে আছে।
তাদের অভিযোগ, গত ৭ দিন ধরে এমন অবস্থা চললেও সমাধান দিতে পারছেনা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এই পরিস্থিতির আশঙ্কা করে কর্তৃপক্ষকে আগেই অবগত করা হয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও কোন সমাধানের উদ্যোগ নেননি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালভার্টের সামনের ৭০ শতক জায়াগায় মাটি ভরাট করে চতুর্দিকে ইটের বাউন্ডারি দিয়েছেন লিটন নামের এক ব্যক্তি। এতে বন্ধ রয়েছে পানির গতিপথ। ফলে বিপরীত দিকের অন্তত ৫০টি পরিবার চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
উত্তর জালাসী এলাকার আব্দুল মোমিন বলেন, ঈদের আগের দিন থেকে আমাদের এই সমস্যা, কবে শেষ হবে কে জানে। প্রত্যেকটি পরিবারেই চুলা বন্ধ, রান্না হচ্ছেনা। শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে। চলাচলেও ব্যাপক সমস্যা।
ওই এলাকার সলিমত আলী বলেন, ৬ ধরে আমরা পানিবন্দি। ঘরে পানি ঢুকেছে। এজন্য রাতে বাড়িতে থাকতে পারছি না। আশপাশের মানুষজন আমাদের রান্না করে খাবার দিচ্ছেন। গত বর্ষায় আমাদের বাড়িতে পানি ওঠেনি। এখন কালভার্ট দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের গ্রামের প্রায় ৫০টি বাড়িতে পানি লেগে থাকছে।
সিরাজুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, কালভার্টের সামনে যখন মাটি ভরাট করা হয় তখনই আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম, মেয়র মহোদয়কে জানিয়েছি। এখানে পানি নিষ্কাশনের জন্য আলাদা কালভার্টের আশ্বাস দেয়া হয়েছিলো, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আমাদের একটা স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। এভাবে পানিবন্দি থাকা যায়না।
বিলকিস বেগম নামের অপরজন বলেন, ঘরের মেঝে পর্যন্ত পানি। চলাচল করা যাচ্ছেনা। রাত নির্ঘুম থাকতে হয়। শিশু-বয়স্করা বেশি দুর্ভোগে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
কালভার্টের সামনে পানির গতিপথ আটকে অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে জমির মালিক লিটন পরে কথা বলবো বলেই মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিল লুৎফর রহমান বলেন, কালভার্টের পাশে আগে ফাঁকা জায়গা ছিলো। এখন যে যার মত ভরাট করে বসত গড়েছেন। কেউ কারো জায়গা দিয়ে পানি যেতে দিচ্ছেননা। কদিন ধরেই আমি চেষ্টা করতেছি, কিন্তু কেউ ভ্রুক্ষেপ করছেনা। তারপরও মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে একটা সুরাহার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, কালভার্টের সামনের এই বাউন্ডারিটা যার জমি সে পৌরসভার অনুমতি নিয়ে করেছেন, অনুমতি দিয়েছেন আগের মেয়র। আমরা চাইলেই এটা ভাঙতে পারিনা।
পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন বলেন, টানা এবং ভারী বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন নিচু এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল হক বলেন, দুর্গত এলাকায় শুকনা খাবার ও খিচুড়ি বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের সহায়তা করা হবে।