নিজস্ব প্রতিনিধি ঃগ্রামে দলে দলে কৃষকেরা মাজায় গামছা বেঁধে ধান কাটতে শুরু করেছে । বৈশাখ মাসের শুরু থেকে কয়েক বার ঝড় ও বৃষ্টি হতে দেখা গেছে। ঝড়ে অধিকাংশ ধান গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। দু,একটি বিলে পানি জমতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। ঝড় বৃষ্টির কারণে ধানে পচন ও ঝরে যাওয়া শুরু হয়েছে। অন্যদিকে শ্রমিক সংকটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন কৃষকেরা।

সপ্তা দুয়েক আগে থেকে জেলার বাগমারা , মোহনপুর, গোদাগাড়ী, তানোর উপজেলার বিলের ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটার মৌসুম এলেও আবহাওয়ার কারণে শ্রমিকদের সংখ্যার সাথে বেড়েছে পারিশ্রমিক। সর্বনিম্ন ৩৫০ থেকে ১ হাজার টাকা ছাড়া ধানের কাজ করার শ্রমিক নেই বললেই চলে।
রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৬৬ হাজার ১৪০ হেক্টর। এরমধ্যে উফশি জাতের ৫৯ হাজার ৬৪০ হেক্টর এবং হাইব্রিড ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর। যা গতবছর ছিলো ৬৬ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমি। তবে ২০২১-২২ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদের পরিমাণ বেশি হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও তা পূরণ হয় নি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে আবাদকৃত জমির পরিমান। জেলায় এ বছর ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধাসের চাষ হয়েছে। এবার প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৩৪ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গৃহস্থ বাড়ির কাজগুলো মূলত কামলারা করে থাকে। বর্তমান সময়ে স্থায়ী কামলা বা শ্রমিক খুব একটা দেখা যায় না। এক সময় খাবার, ধান এবং টাকার বিনিময়ে শ্রমিকেরা কাজ করতেন। বর্তমান সময়ে টাকার জন্য এবং ধানের জন্য কাজ করতে যাচ্ছে। কাজের ধরণ যেমনি হোক, টাকার পরিমাণ বেশি না হলে কামলা পাওয়া অসম্ভব। এখনকার সময়ে কামলাদের পারিশ্রমিক দিতে বাধ্য হতে হয় কৃষকদের ।
সরজমিনে দেখা গেছে , দুর থেকে দেখা যায় বিলগুলোর অধিকাংশ ধান ক্ষেতে একটু পর পর মাতল পরা অথবা গামছা পরা মাথা ওঠা নামা করছে। প্রতিটি বিলে ৪ থেকে ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। ঝড় বৃষ্টির কারণে ধানের গাছ পড়ে যাওয়ায় হাঁটু গেড়ে অথবা বসে ধান কাটছেন কৃষকেরা।
গোদাগাড়ী উপজেলার সরমংলা মোজার লালবাগ, তেতুল তলা,আমতলা,হেলিপ্যাড এগুলো এলাকায় বেশি ধান হয়। দেখা গেছে শ্রমিক না পেয়ে মোতাকাব্বির ও তার বাবা ২ বিঘা জমির ধান কাটছেন হেলিপ্যাড এলাকার এক ধান ক্ষেতে।
কেন তারা শ্রমিক নিচ্ছেন না জানতে চাইলে মোতাকাব্বির বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে ৭ থেকে ৮ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। প্রতিমণ ধানের দাম ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। ৭ জন শ্রমিকের দৈনিক চাহিদা সকাল দুপুর খাবার, তিন থেকে চার প্যাকেট সিগারেট, বেলা গেলেই দিতে হবে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। দেখা যায়, সারা বছর ক্ষেতের ধান করতে চারা, ঔষধ, হাল চাষ, শ্রমিক ও ধান ঘরে তোলাসহ বিঘা প্রতি খরচ হয় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। অনেক সময় খরচের টাকা ফসল থেকে আসে না।
দিন মজুরদের মধ্যে অনেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে। সকাল থেকে বেলা ২ টা বা বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করে। এছাড়াও একদল দিন মজুরেরা ধান কাটা, ধান মাড়ানো, ধান ঘরে তোলা, ধানের আউড় পালা দেয়া পর্যন্ত চুক্তিতে কাজ করে। এখন চুক্তিভিত্তিক কাজ পছন্দ করছে শ্রমিকরা বলে জানা গেছে।
শ্রমিকের সংকট সম্পর্কে বাগমারার শাহিদুল ইসলাম নামের এক চাষী জানান, বাগমারার নাককাটি, সোনাবিল, বিলসেতি, হাগড়াকান্দি, জুকার বিল, হাতিয়ার বিল, মরাবিল, কোলার বিল, যশোবিলসহ কয়েকটি বিল ধানের ফসলের জন্য সুপরিচিত। ধান কাটার মৌসুমে অনেক কামলারা মজুরি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা জানতে পারলে শহর থেকে গ্রামে চলে আসে কাজ করতে। আসল কামলা হাতে গোনা কয়েকটা গ্রামে থাকে। কৃষি কাজ সব সময় না থাকায় বিভিন্ন পেশা তারা বেছে নিয়েছে। কেউ অটো চালায়, কেউ গার্মেন্টস কর্মী।
তিনি আরও বলেন, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ধানের সব কাজ শেষ হয়ে যায়। ধান কাটতে এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাই। কামলা পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু নাম মাত্র কামলা। ভালো কামলা পাওয়া যাচ্ছে না। মজুরি যা তা নিলে ভালো হয়। কামলাদের মজুরি বাড়ার কারণ ঝড় বৃষ্টি। অনেক সময় ধার্য করা মজুরির চাইতে বেশি টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।
কেন বেশি টাকা দাবি করা হয় জানতে ঝিকরা বিলে কাজ করা মোহসিন নামের দিনমজুর জানান, এটা একটা মৌসুম। কৃষক কাজ করাবে টাকায় না পোষালে শ্রমিক কাজ করবে না। কৃষকের কিছু করার নাই। এমন কি ভ্রাম্যমান আইন আদালত করেও লাভ নাই। কারণ, কৃষকের ঘরে তো ধান উঠতে হবে।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *