নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ রাজশাহী জেলার অন্তর্গত পুঠিয়ায় দুলাভাই বাবুকে বাগান চাষে পার্টনার হিসেবে নিয়ে নিজেকেই হতে হয়েছে নিজ বাগানের কর্মচারী। বাগান থেকে উৎপাদিত ফল ও ফসলের টাকা আত্মসাৎ করেছেন দুলাভাই বাবু। বর্তমানে নিঃস্ব হওয়ার পথে মতিন হারাতে বসেছে শেষ সম্বল বসত ভিটা। বাবুর ফাঁদে পুরো পরিবার ধ্বংসের মুখে বলে জানিয়েছেন পুঠিয়া উপজেলার ভাড়রা গ্রামের মৃত আতাহার সরকারের ছেলে মোঃ মতিন আলী।
অভিযুক্ত ব্যক্তি পুঠিয়া উপজেলার কাঁঠালবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোঃ বাবু আলী।
এ সম্পর্কে রাজশাহী চারঘাট উপজেলার ৪নং নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিয়দের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের কাছে ন্যায় বিচার দাবি করেছেন মতিন।
মতিনের বিষয়ে জানতে পেরে সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, ৫ থেকে ৬ বছর আগে মতিন প্রিন্স নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে চারঘাট উপজেলাধীন কালুহাটী এলাকায় ৬ বিঘা জমি চাষের জন্য নেন। যেখানে শর্ত থাকে ৫ বছরের লীজ। বিঘা প্রতি বছরে ১৩ হাজার টাকা প্রিন্সকে দিতে হবে। এক বছরে আসে ৭৮ হাজার টাকা। ৫ বছরে তাকে পরিশোধ করতে হবে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। ভূক্তভোগী মতিন ঐ জমিতে পেয়ারা বাগান করেন। ঐ জমিতে পেয়ারার বাগান করার এক থেকে দেড় বছর পর ফসল করার জন্য অর্থ বিনিয়োগে বাঁধা প্রাপ্ত হন মতিন। ফলে মতিনের বোন জামাই বাবু ২ লক্ষ টাকা প্রদানের মাধ্যমে পার্টনার হিসেবে এগিয়ে আসেন। মতিন জানান, ২ লক্ষ টাকার মধ্যে ১ লক্ষ ৫৫ হাজারের মত টাকা পেয়েছিলেন। তারপর, পেয়ারার ভালো ফলন হয়। পেয়ারা চাষ শেষে ঐ জমিতে হলুদ ও কলার চাষ হয়। বর্তমানে চাষী মতিন দাবি করছেন, আমার দুলাভাই বাবু আমাকে লেবার হিসাবে দৈনিক পারিশ্রমিক দিতেন। বাবু বাগানে সময় দিতেন না। নতুন পাহারাদার হিসেবে ভুলু নামে একজনকে রাখতেন। ভুলু ও বাবু এক রকম ফাঁদে ফেলে বাগানের সকল টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছেন মতিন।
মতিন জানান, ঐ জমি থেকে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ কার্টুন পেয়ারা বাজারজাত করা হয়েছে যার সর্বনিম্ন মূল্য ৬০ লক্ষেরও বেশি। ১০০ মণ হলুদ বিক্রি করা হয়েছে যার সর্বনিম্ন মূল্য ১ লক্ষ টাকা। কলা বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার। কিন্তু তিনি পারিশ্রমিক পেলেও পার্টনার হিসেবে ফসলের টাকা তিনি পাননি।
নিজের ফসলের টাকা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ভূক্তভোগী মতিন জানান, বাবু আমার বোনের জামাই। তাঁর কাছেই টাকাগুলো আসতো। ঐ টাকার কথা বললে তিনি বলতেন, টাকা একবারে দেবেন। সংসার চালানোর জন্য তো পারিশ্রমিক পাচ্ছেন বলে উড়িয়ে দিতেন।
এদিকে কালুহাটীর মঙ্গলপাড়ার মনসুর রহমানের ছেলে মোতালেব নামের এক ব্যক্তি মতিনের বাগানে পাহারাদার হিসেবে দেড় বছর কাজ করতেন। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জানান, মতিন ভাই খুবই ভালো মানুষ। লেখাপড়া জানেননা। বিশ্বাস করে তাঁর বোন জামাইকে যেদিন থেকে শেয়ারে নিয়েছেন সেদিন থেকে আমাকে পাহারা থেকে বাদ দিয়েছেন। তারপর থেকে আমি ঐ বাগানে প্রতিদিন লেবার হিসেবে মতিন ভাইয়ের সাথে কাজ করতাম। আর মতিন ভাই গায়ে গতরে খেটেছেন। ফসল ও ফল বাম্পার ফলন হয়েছিল বাগানে। সব মাল ঢাকায় পাঠাতেন বাবু ও ভুলু। মতিন যে টাকা পেতেন না এটা জানতাম না। বাবু সুদের ওপর টাকা খাটায় তার পক্ষে সাহায্য গ্রহনকারীরাও ফাঁদে পড়ে যায়। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। শুনেছি, বাবু তার বউয়ের সব ভাইদের টাকা দিয়ে সাহায্য করছেন। এখন, সাহায্য যদি সুদ হয় তাহলে বাবুর পক্ষে সবাই সম্ভব। মতিন এখন একা এবং নিস্ব।
ঐ পেয়ারার বাগান বছর শেষে এসে বাবু কালুহাটীর সাঈদ নামের এক ব্যক্তির কাছে মতিনের অনুমতি ছাড়া টাকার বিনিময়ে চাষ করার এক বছরের লিজ দেন।
কালুহাটীর মোতালেবের বাবা মনসুর জানান, মতিনের আর বাবুর মধ্যে ফসলের টাকা নিয়ে ঝামেলা চলছে। এই নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে বেশ কয়েকবার বিচার সালিশে বসার কথা থাকলেও বাবু বসেননি। আর বাবুর আসলে কালুহাটী আসার মুখ নেই।
মতিনের ভাই রাজ্জাক ও ভুলু জানান, মতিন বাবুর কাছে জমি বিক্রি করেছেন। বাবুর টাকায় বাড়ীর কাজ শেষ করেছেন। আজ মতিন বাবুর বিরুদ্ধে কথা বলছে সেই সাথে জোর স্ট্যাম্পে মতিনের সহি নেওয়ার বিষয়ে জানতে তারা বলেন দুলাভাই বলেছে টাকা পাবে তাই সহি করিয়ে নিয়েছি। মতিনকে দুলাভাই কবে কিভাবে টাকা দিয়েছে আমরা কেউ দেখিনি।
বাবুর কাছে মতিনের জমি বিক্রির কথা জানতে চাইলে রাজ্জাক বলেন, আমি হাজী মানুষ আমি মিথ্যে বলিনা। মতিন বাবুর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এমন দুই একবার ফোন দিয়ে আমাকে জানিয়েছেন বাবু আমি কোনদিন টাকা মতিনকে দিতে দেখিনি। মাঝে সালিশ হলো মেম্বার মামুনসহ। সেখানে, বাবুর নামে যে জমি আছে সেটা আমরা বাবুর নামে স্ট্যাম্পে একটা লেখা পড়া করে দিয়েছি । মতিন যে টাকা বাবুর কাছ থেকে নিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমি শুনেছি কোনদিন টাকা দিতে দেখিনি। তাহলে কেন লেখাপড়া জোর করে করে দিয়েছেন প্রশ্ন করা তিনি বাহানা করে সরে জান।
উক্ত বিষয় অভিযুক্ত বাবুর কাছে কালুহাটীতে মতিনের লীজকৃত জমিতে পার্টনার হিসেবে ব্যাবসা ও টাকা আত্বস্বাতের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করেন এবং পরে সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে পড়ে স্বীকার করে বলেন ব্যবসার যাবতীয় টাকা আমার আমার ব্যাংকে এসে জমা হতো এবং আমি মতিন ডেকে তার অংশ দিয়ে দিতাম। তিনি আরো জানান, আমার সকল প্রমান আছে। আমার বউয়ের পরিবারের কাকে কত টাকা দেয়া আছে। তাদেরকে আমি সাহায্য করি। কেউ বলতে পারবে না কারও সাথে আমার সম্পর্ক কারও খারাপ। আমি অসুস্থ তাই ওভাবে বসার সময় হচ্ছে না।
এদিকে, মতিন আরও জানান, স্থানীয় ইউ.পি সদস্য মোঃ মামুন আলী ০৮ ওয়ার্ড কে বিষয়টি জানালে, বাবু নিজেকে পার্টনার অস্বীকার করে। সে সময় জোরপূর্বক জমি লিখে নেন তারা। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে গেলেও থানা গ্রহণ করেননি বলে জানান তিনি ।
এসম্পর্কে চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ফোন দেয়া হলে ফোন ধরেননি তাঁরা।