গাইবান্ধা প্রতিনিধি ঃ গাইবান্ধায় দাফনের ৯ মাস পর বাড়ি ফিরে এসেছেন এক বৃদ্ধা- এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনা নিয়ে জেলাজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। ওই বৃদ্ধাকে এক নজর দেখতে সেই বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে হাজারও মানুষ।
তবে পুলিশ বলছে, দুই বৃদ্ধা এক নন। না বুঝে কেউ গুজব ছড়িয়েছে। ওই বাড়ি থেকে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে তারা হেফাজতে নিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সদর থানার ওসি (অপারেশন) জাহাঙ্গীর আলম জানান, গাইবান্ধা জেলা শহরের ডেভিট কোম্পানিপাড়ার মৃত আনিসুর রহমানের স্ত্রী ৯২ বছর বয়সী বাছিরন বেওয়া ৯ মাস আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। পরে তাকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে গাইবান্ধা রেলস্টেশনে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধাকে সেই মৃত বাছিরন বেওয়া ভেবে এক প্রতিবেশী তার পরিবারকে খবর দেন। পরে বাছিরনের মেয়ে সাজেদা বেগম সেখান থেকে ওই বৃদ্ধাকে নিজের মা ভেবে বাড়িতে নিয়ে যান। খবরটি পরে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং কৌতূহলী মানুষ ওই বাড়িতে গিয়ে ভিড় জমাতে শুরু করে।’
বিভিন্ন মাধ্যমে এ সংবাদটি পেয়ে ডেভিট কোম্পানিপাড়ায় সাজেদা বেগমের বাড়িতে যায় পুলিশও। পরে তারা নিশ্চিত হয়, অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধা মৃত বাছিরন বেগম নন।
বুধবার দুপুরে ওসি জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল থেকে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেন। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভুয়া সংবাদে সেখানে অনেক লোক জমায়েত হয়েছে। আমরা ওই বৃদ্ধাকে থানায় এনেছি। অভিভাবক পেলে তাকে তার পরিবারের কাছে দেয়া হবে।’
পুলিশের ভাষ্যমতে, উদ্ধার হওয়া ওই বৃদ্ধা নিজের নাম পরিচয় দিতে পারছেন না। শুধু জানিয়েছেন- তার বাড়ি সিলেট জেলায়। মূলত তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন।
ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেশী আমির হোসেন বলেন, ‘বাছিরন বেওয়ার চেহারার সঙ্গে এই মহিলার চেহারা অবিকল। তবে বাছিরন বেওয়ার গাল-মুখ ছিল ভাঙা; এনারটা একটু আলাদা। এই বৃদ্ধা সেই বৃদ্ধা কি না, তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’
মৃত বাছিরন বেগমের ছেলে শফিকুল ইসলাম গেদু বলেন, ‘আমার মা ৮-৯ মাস আগেই মারা গেছে। স্টেশন মসজিদের পাশে তার জানাজাও হয়েছে। গাইবান্ধা গোরস্থানপাড়ার গোরস্থানে তার দাফন কাফনও হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হুবহু না হলেও আমার মায়ের চেহারার সঙ্গে তার মিল আছে। আর এই মিল থাকার কারণেই- গাইবান্ধা স্টেশন থেকে তাকে কে বা কারা আমার ছোট বোনের বাড়িতে নিয়ে গেছে। পরে আমি সেখানে গিয়ে দেখি- ইনি আমার মা নন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৃত বাছিরন বেওয়ার এক নাতি বলেন, ‘ইনি আমার নানির মতোই অবিকল দেখতে। তবে ভালো করে দেখি- ডুপ্লিকেট কপি।’
গাইবান্ধা পৌর গোরস্থানের গোরখোদক টুলু মিয়া মৃত বাছিরন বেওয়ার কবর খুঁড়েছেন নিজ হাতে। জানাজা ও দাফনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। খবর পেয়ে টুলু মিয়াও অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধাকে দেখতে যান। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত এ রকম ঘটনা ঘটেনি। এমনকি নবী ও মহানবীরাও এমন সুযোগ পাননি। কবর থেকে লাশ জীবিত উঠে আসা- নেহাতই গুজব।’
এ নিয়ে সদর থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধা ভাসমান। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। নিজের নাম পরিচয়ও দিতে পারছেন না। তবে জেলার নাম বলেছেন- সিলেট।’
তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পরিচয় পাওয়া গেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।