তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন তাদের ঘর বাড়ি রক্ষায় প্রটেকশান ওয়াল দেয়া শুরু করেছেন। কিন্তুু সংসদ নির্বাচনে কাঁচিতে ভোট না দিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার কারনে তাদের প্রটেকশান ওয়াল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভূমিহীন ভুক্তভোগীদের মাঝে। জানা গেছে, গত মঙ্গলবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আবিদা সিফাত অনুমতি ব্যতিত খাস পুকুরে প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণের অভিযোগে এই প্রটেকশান ওয়াল ভাংচুর করে গুড়িয়ে দিয়েছেন। উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার প্রকাশনগর জাটভাঙ্গী মহল্লায় এই ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে প্রত্যন্ত পল্লীর একটি পুকুর পাড়ের প্রটেকশান ওয়াল গুড়িয়ে দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়। সচেতন মহলের ভাষ্য, যেখানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাস সম্পত্তি, হাট ও জেলা পরিষদের জায়গা বেদখল, পুকুর জবরদখল, কৃষি জমিতে পুকুর খনন, ফসলী জমির টপসয়েল বাণিজ্যে, ভিপি সম্পত্তিতে পুকুর খননের মতো ঘটনা ঘটছে। সেখানে প্রত্যন্ত পল্লীর পুকুরের প্রটেকশান ওয়াল গুড়িয়ে দিয়ে ১৫টি বসতঘর হুমকিতে ফেলা কতটা যুক্তিযুক্ত ? সেটা অবশ্যই অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে।
জানা গেছে, উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার প্রত্যন্ত পল্লীর প্রকাশনগর জাটডাঙ্গী মহল্লায় সরকারি খাস পুকুর রয়েছে। এদিকে পুকুর পাড়ের চারদিকে প্রায় দুইযুগ ধরে ১৫টি ভুমিহীন পরিবার বসতঘর করে বসবাস করছে। তবে পুকুর পাড় ভাঙ্গায় এসব বসতঘর চরম হুমকির মুখে পড়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর পৌর মেয়রের দুয়ারে ধর্ণা দিয়েও পুকুর পাড়ে প্রটেকশান ওয়াল নির্মাণ করতে পারেননি।এতে দিন দিন তাদের বসতঘর হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে বসতঘর রক্ষায় ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে সকলে চাঁদা তুলে পুকুর পাড়ে প্রটেকশান ওয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। গত সোমবার থেকে তারা প্রটেকশন ওয়ালের নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার কোনো পুর্বঘোষণা ব্যতিত, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আবিদা সিফাত এসব প্রটেকশন ওয়াল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ একই পুকুর পাড়ের খাস জায়গা দখল করে প্রকাশনগর মহল্লার বাসিন্দা ও গোলাম রাব্বানীর অনুগত আব্দুল আলিম ফ্ল্যাট বাড়ি করছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়নি। এনিয়ে ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে চরম অসন্তোষের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে।
এঘটনায় ভুমিহীন পল্লীর অসহায় বাসিন্দারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫৫), রফিকুল ইসলাম (৫০), মোস্তাফিজুর রহমান(৪৫) আনু বেওয়া ও (৬০) গোলেনুর (৫০) জানান, পুকুর পাড়ের চারপাশে ১৩টি ভুমিহীন ও ২টি ব্যক্তি মালিকানাধীন বসতঘর রয়েছে। তারা বলেন, এদের মধ্যে ও তার পুত্র মেহেদী মাদক ব্যবসা করে। তারা পিতা- পুত্রসহ লুসা ও আলমগীর গোলাম রাব্বানীর অনুগত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা প্রকাশ্যে কাঁচি প্রতিকের ভোট করেছেন। তাদের কথা মতো কাঁচি প্রতিকে ভোট না দেয়ায় তারা সংঘবদ্ধ ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দাদের ওপর নানা জুলুম-নির্যাতন শুরু করেছে। আনু বেওয়া বলেন, আব্দুর রহিম ও মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে তাকে মারপিট, তার লাগানো দুটি গাছ কাটাসহ পুকুরের মাছ লুট করা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আবিদা সিফাত মুঠোফোনে জানান, খাস জায়গায় প্রটেকশান ওয়াল নির্মাণ করেছে, সেই জন্য ভাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু খাস জায়গায় আর সিসি ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটা কেন ভাঙ্গা হলোনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বাড়ি খাস জায়গায় নাই,যদি খাস জায়গায় পড়ে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এবিষয়ে আব্দুল আলিম বলেন, তার ওটা কেনা জায়গা, তবে অল্প কিছু খাস তার ভেতর পড়েছে।এবিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফ খাঁন বলেন, ভুমিহীনদের সঙ্গে যেটা করা হয়েছে সেটা অতিব দুঃখজনক ঘটনা। এটা ভূমি কর্মকর্তার ঠিক হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।