ডেস্ক নিউজ ঃ ট্রান্সজেন্ডার পুরুষেরা টেস্টোস্টেরন থেরাপি নেয়ার পরেও তাদের ডিম্বাশয়ের অপরিপক্ব ডিম্বাণু পরিপক্ব করার সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষের সন্তান জন্ম দেয়ার জটিলতার অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিম্বাশয়ে হাজারও অপরিপক্ব ডিম অনেকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। এর মধ্যে প্রতি মাসে একটি পরিপক্ব হয়ে ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হয়। এ সময় ডিমটি শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত হওয়ার সুযোগ পেলে তা ভ্রূণ তৈরি করে।
ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ জন্মগতভাবে নারীর দেহবৈশিষ্ট্য ধারণ করেন, তবে মানসিকভাবে তাদের যৌনবৈশিষ্ট্য পুরুষের। বিশ্বের অনেক দেশে টেস্টোস্টেরন হরমোন থেরাপির মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের দিকে নিয়ে যান।
তবে এ ধরনের চিকিৎসা গ্রহণকারীদের জৈবিকভাবে সন্তান নেয়ার বিষয়টি বেশ জটিল। সন্তান নিতে চাইলে শুরুতেই টেস্টোস্টেরন থেরাপি বন্ধ করে মাসিক চক্র ফিরিয়ে আনেন চিকিৎসকেরা। এতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এরপর নারীর বিভিন্ন হরমোনভিত্তিক ওষুধ প্রয়োগ করে ডিম্বাশয়কে উদ্দীপ্ত করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় পরিপক্ব ডিম। পরে সেই ডিম্বাণু ল্যাবরেটরিতে হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয় এবং সুবিধাজনক সময়ে নিষিক্ত করা হয় শুক্রাণুর সঙ্গে।
অস্ত্রোপচারের পদ্ধতিটি বেশ জটিল। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে টেস্টোস্টেরন থেরাপি বন্ধ রাখলে অবসাদ, মেজাজে পরিবর্তন এবং ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
এই প্রথম একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তারা টেস্টোস্টেরন হরমোন থেরাপির মধ্যে থাকা ট্রান্স পুরুষদের ডিম্বাশয় থেকেই পরিপক্ব ডিম্বাণু তৈরির উপায় বের করেছেন।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন জীববিজ্ঞানী ইভলিন টেলফারের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় গবেষণাটি। এতে দেখা গেছে, কয়েক বছর টেস্টোস্টেরন থেরাপি নেয়ার পরেও ট্রান্সজেন্ডার পুরুষের ডিম্বাশয় থেকে কার্যকর ডিম্বাণু পাওয়া সম্ভব।
টেলফারের নেতৃত্বে গবেষক দলটির প্রথম কাজ ছিল টেস্টোস্টেরন থেরাপি ডিম্বাশয়ে কী প্রভাব ফেলে তা খুঁজে বের করা। এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে, যুক্তরাজ্যের দুটি লিঙ্গনির্ধারণী ক্লিনিকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে দলটি।
ওই দুটি ক্লিনিকে টেস্টোস্টেরন গ্রহণকারী যেসব ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ ডিম্বাশয় অপসারণ করেছেন, সেগুলোর সঙ্গে নারীর স্বাভাবিক ডিম্বাশয়ের তুলনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে টেস্টোস্টেরন থেরাপি গ্রহণকারী ট্রান্সজেন্ডার পুরুষদের ডিম্বাশয়ে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। কোলাজেন বেশি এবং ইলাস্টিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় ডিম্বাশয়ের টিস্যু শক্ত হতে শুরু করে। এর ফলে ফলিকলগুলোর পক্ষে পরিপক্ব, নিষিক্ত হওয়ার উপযোগী ডিম্বাণু তৈরির কাজটি জটিল হয়ে যায়।
গবেষণায় ট্রান্স পুরুষের ডিম্বাশয়ের প্রতিটি ফলিকলের চারপাশের শক্ত টিস্যু কেটে সাফল্য পাওয়া গেছে। এটি টিস্যুগুলোর মধ্যে সিগন্যালিংকে উদ্দীপ্ত করে ফলিকলগুলো পরিপক্ব ডিম মুক্ত করতে সাহায্য করে। গবেষকেরা প্রাথমিকভাবে একটি বিন্দুতে অল্পসংখ্যক ডিম পরিপক্ব তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন, যেগুলোকে ল্যাবরেটরিতে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত করা সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই উদ্ভাবন সন্তানধারণের জন্য ট্রান্সজেন্ডার পুরুষদের নানামুখী শারীরিক ও আইনি সীমাবদ্ধতার অবসান ঘটাবে। মিনেসোটার মায়ো ক্লিনিকের প্রজনন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সামির বাবায়েভের মতে, ‘এটি অত্যন্ত চমকপ্রদ ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হতে চলেছে যা সম্ভাব্য অনেককে সাহায্য করবে।’