নিউজ ডেস্ক: বান্দরবানের চিম্বুক এলাকার জামিনী পাড়ার পাহাড়। সবুজ পাহাড় হলুদ হয়েছে জুমের পাকা ধানে। এতে খুশি হওয়ার কথা থাকলেও ফলন কম হওয়ায় হতাশ জুমিয়ারা (জুম চাষিরা)।
পাহাড়ের ঢালুতে জুমে একসঙ্গে ধান, ভুট্টা, তিল, তিশি, কুমড়া, চিনাল (বাঙ্গি জাতীয়), মারফা (শসা জাতীয়) ও মরিচসহ কয়েক ধরনের ফসলের চাষ করে থাকেন জুমিয়ারা। তবে তাদের প্রধান ফসল ধান। এই জুম চাষ থেকে পাওয়া ফলন দিয়ে পুরো বছরের খাদ্য ও অর্থের যোগান দেন জুম চাষিরা।
এবারও পাহাড়ের চূড়ায় নানা ফসল রোপণ করেন তারা। কিন্তু এবার ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ফলন আশানুরূপ হয়নি বলে জানান জুমচাষিরা। ফলে জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল এই পাহাড়ি গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সরেজমিনে চিম্বুকের জামিনী পাড়া এলাকায় গিয়ে কথা হয় জুমচাষি পালে ম্রোর সঙ্গে।
তিনি জানান, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ধান কাটা। কাটা ধান রাখা হয় ক্ষেতের পাশের জুমঘরে। সেখানে চলে মাড়াই। এরপর মাড়াই করা ধান শুকিয়ে নেওয়া হয় বসতঘরের আঙিনায়।
ফলন কেমন হলো জানতে চাইলে বিষাদ কণ্ঠে তিনি বলেন, গত বছর ৪ হাঁড়ি (১০ কেজি) ধানের বীজে জুম চাষ করে ২শ’ হাঁড়ি ধান পেয়েছিলাম। এ বছরও রাস্তার পাশে উঁচু পাহাড়ের ঢালুতে ৪ হাঁড়ি ধানের বীজে আগাম জুম চাষ করি। কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুমে অপর্যাপ্ত বৃষ্টি ও বাতাস বেশি থাকায় ফলন তেমন ভালো হয়নি। গত বছর যেখানে ২শ’ হাঁড়ি ধান পেয়েছিলাম সেখানে এবার ১শ’ হাঁড়ি ধান পাব কিনা সন্দেহ আছে।
এছাড়া জুমের ধানের সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয় মারফা (শসা জাতীয়), তিল, তিশি, কুমড়া, ভুট্টা, মরিচসহ নানা ফল। সেগুলোও পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু সেগুলোর ফলনও ভালো হয়নি। ফলে মূলধন ও আগামী বছর পরিবার নিয়ে খাদ্যাভাবের আশঙ্কা করছেন তিনি।
আরেক চাষি তম্রুই ম্রো জানান, তিনি প্রায় ৮ হাঁড়ি বীজের ধান পাহাড়ি জমিতে জুম চাষ করেছেন। দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ার কারণে শ্রমিকের বেতনও বেড়েছে।আগে ধান কাটার জন্য ২ থেকে ৩শ’ টাকা দিয়ে শ্রমিক পাওয়া যেত। এখন জনপ্রতি ৫শ’ টাকা দিতে হয় শ্রমিকের বেতন। ফলন ভালো না হওয়ায় চিন্তিত তিনিও।
বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বাগান পাড়া এলাকার বিধবা নারী জুমচাষি সংরুম ম্রো, তার ছেলে মুংইয়া ম্রো ও তন ইয়া ম্রো। দুই সন্তান নিয়ে ৪ হাঁড়ি ধানের বীজ জুম করেছেন। তিনি নিয়মিত জুমচাষ করেন। কিন্তু এবার অনাবৃষ্টির কারণে জুমের ধানসহ অন্যান্য ফসল ভালোভাবে বেড়ে ওঠেনি। এতে আগামীতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন তিনি।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, জেলায় জুমের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫শ ২০ হেক্টর। অর্জন হয়েছে ১৫শ ৬৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি জুমের আবাদ অর্জন হলেও গত বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কিছুটা প্রভাব পড়ছে গাছ বৃদ্ধিতে। ফলে তুলনামূলক ফলনও কম পাচ্ছে কৃষকরা।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে আগাম জুমের আবাদ যারা করেছেন তারা তুলনামূলক ভালো ফলন পাচ্ছেন। যারা মধ্যবর্তী ও শেষে করেছেন তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে শেষে যারা আবাদ করেছেন পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে তারা অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। এছাড়া সম্পূর্ণ জুম কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।