নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ ২৪ বছর আগে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক ও অভিযোগপত্রের ১ নম্বর আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গুলশানের একটি বাড়ি থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আশিষ রায় চৌধুরী রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও)।
গুলশানের পিং সিটির পাশে ১০৭ নম্বর রোডের নং-২৫বি নম্বর বাড়ির ফ্ল্যাট-এ১ থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন। র্যাব-১০ ও সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা অভিযান পরিচালনা করেছে।
অভিযানের পর আশিষ রায় বাড়ির সামনে ব্রিফিং করেন খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘গত ২৮ মার্চ তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়। ২৯ মার্চ থেকে এই বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বাসা মিরপুর ডিওএইচএস। এই বাসাটি তিনি আত্মগোপনের জন্য ব্যবহার করছিলেন। বাসা থেকে ২৩ বোতল মদ, বেশ কিছু বিয়ার, সিসার সরঞ্জাম উদ্ধার করেছি।’
দুজন নারীকে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তার বাসায় আমরা দুজন নারীকে পেয়েছি। তার পরিবার এখানে থাকেন না। দুজন নারীর পরিচয় ওবং কী উদ্দেশ্যে ছিলেন, তা জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।
‘হত্যায় তার সম্পৃক্ততা ও অন্যান্য ডিটেলস আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। আগামীকাল বিস্তারিত জানানো যাবে।’
র্যাব কমান্ডার বলেন, ‘৩০ মার্চ থেকে এই বাসায় আত্মগোপনে ছিলে আশিষ রায়। এই বাসাটি অন্য আরেকজনের নামে ভাড়া করা। আশিষের দাবি, তিনি নিজেও এই ব্যক্তিকে চেনেন না।
‘বাসায় দেহব্যবসা চলে বলে ধারণা অভিযানে আসা র্যাব কর্মকর্তাদের। এই বাসায় ফিক্স কেউ থাকেন না।’
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের সময় আশিষ রায়ের বাড়ি থেকে ১৫ থেকে ২০ বোতল মদ ও সিসা জব্দ করা হয়েছে। রাত ১১টা ৪৮ মিনিটের দিকে আশিষ রায়কে বের করে সাদা একটা মাইক্রবাসে র্যাব সদর দপ্তরে নেয়া হয়।
এর আগে রাত ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে মদসহ জব্দ করা আলামত বের করেন র্যাব সদস্যরা। এরপর ১১টা ৩৩ মিনিটের দিকে বাড়ির ভেতর থেকে দুই নারীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
এর আগে ২০ মার্চ সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পরোয়ানা জারি হওয়া অন্য দুই আসামি হলেন, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও সেলিম খান।
উচ্চ আদালতের আদেশে দীর্ঘদিন এ মামলার বিচার কাজ স্থগিত ছিল। ২০১৫ সালে এই মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। প্রত্যাহারের সেই আদেশসহ মামলার নথি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে আসে।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বিয়ে করেন ওই সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতিকে। বিয়ের কিছু দিন পর তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। ওই সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোহেল চৌধুরী। জড়িয়ে পড়েন নেশার জগতে। সেই অন্ধকার জগতের অপরাধীদের সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই খুন হন সোহেল চৌধুরী।
বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
অভিযোগপত্রে কাদের নাম
আদনান সিদ্দিকী, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারেক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
ওই বছরই আসামিদের মধ্যে একজন হাইকোর্টে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সাল থেকে দীর্ঘ ১৯ বছর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি স্থগিত ছিল।