এম ইসলাম দিলদার বাঘা (রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
দেশে-বিদেশে স্বাদে ও মানে খ্যাতি রয়েছে রাজশাহীর বাঘার আমের। প্রতি বছর আম সরকারি-বেসকারি উদ্যোগে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বাঘার আম এবার যাচ্ছে ইউরোপের ছয়টি দেশে। তবে সরকারিভাবে নয়, বেসরকারিভাবে ও ব্যক্তি উদ্যোগে পরাগ এগ্রো লিমিটেডের মাধ্যমে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ডে, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় যাবে বাঘা উপজেলার ক্ষীরশাপাত, ল্যাংড়া, আমরুপালি ও তোতাপুরি আম।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে আম রফতানি করছেন বাঘা উপজেলার আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ছানা। ‘বহির্বিশ্বে বাঘার আমের প্রচুর চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। ২০১৯ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজশাহীর প্রায় ৩৫.৭৫ মেট্রিকটন আম রফতানি হয়েছিল। এর মধ্যে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাত, আমরুপালি ও হিমসাগর ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে রাজশাহী থেকে কোনো আম সরকারিভাবে রফতানি হয়নি। তবে বাঘা থেকে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন বেসরকারি ভাবে ৯ মেট্রিকটন এবং অন্যান্য উপজেলা থেকে ১২ মেট্রিকটন আম রফতানি করে। তবে এবার ৭৯০.৩৫ মেট্রিক টন আম রফতানির টার্গেট নেয়া হয়েছে । রফতানি ক্ষেত্রে ভালো সুবিধা পেলে আরো বেশি রফতানি করা হবে।
বাউসা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের কৃষকের বাগান থেকে এই প্রথম পরাগ এগ্রো লিমিটেড এর মাধ্যমে ইউরোপের ছয়টি দেশে হিমসাগর আম রপ্তানি করা হচ্ছে ।
আম চাষি ও আম প্যাকেজিং প্রস্তুতকারক শ্রমিকরা জানান, এবার মৌসুমী বর্ষা না হওয়ায় আমের সাইজ একটু ছোট হয়েছে। তার পরও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েননি। গত বছর ২০ মে আমফানের কারণে আম চাষিরা দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত যদি কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেয় তাহলে চাষিরা এবার হয়তো গত বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে। রফতানিকারকরা নায্যমূল্যে আম ক্রয় করে সব প্রস্তুতি শেষে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। ফলে চাষি ব্যবসায়ী উভয় লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। স্বাদে গুণে ও মানে সেরা হওয়ায় বাঘার আম ব্র্যান্ড হিসেবে বিদেশে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে তারা মনে করেন।
পরাগ এগ্রো প্রকল্প পরিচালক আপেল মাহমুদ পরাগ বলেন, আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বে অষ্টম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাঘার ভেজালমুক্ত “পরাগ এগ্রো” প্রথম চালানে ১ মেট্রিক টন আম ইংল্যান্ড ,ফান্স, জার্মানি, ইতালী ,সুইডেন, অষ্টেলিয়ায় রপ্তানি করা হবে। বিদেশে আম রপ্তানির সুযোগ বাঘা উপজেলা তথা রাজশাহীর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। উত্তম কৃষি পরিচর্যা তথা গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করে বিদেশে আম রপ্তানির সুযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি। সেই সাথে তিনি মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম কে ধন্যবাদ জানান, বাঘার আম বিদেশে পাঠানোর সুষ্ঠ ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। এছাড়াও আম চাষিদের সার্বিক সহায়তার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও উপজেলা কৃষি অফিস কেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, উক্ত এলাকায় ভ্যাকুয়াম হিট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা সম্ভব হলে আরো আম রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে, এজন্য আম চাষিরা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম এমপির ও বাংলাদেশ সরকারের সু- দৃষ্টি কামনা করেন।