

নিউজ ডেস্কঃ স্কুল শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, মুক্তিযোদ্ধা কিংবা কৃষক। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে ব্যাংক হিসাবের ছাতার নিচে আনতে ১০ বছর আগে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে ১০, ৫০ এবং ১০০ টাকায় খোলা যায় ব্যাংক হিসাব। উদ্দেশ্য ছিল, সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির মানুষের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, এখন এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। তবে কিন্তু দীর্ঘ এই সময়ে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৯০ লাখের বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর আগ্রহ না থাকায় নিষ্ক্রিয় হচ্ছে এসব হিসাবে লেনদেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে এসব হিসাবধারী বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর আমানত বেড়েছে ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।
২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকার বিশেষ এসব অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯৩১টি। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৯৫৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ২ কোটি ২৫ লাখ ৮ হাজার ২২টি হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে হিসাব বেড়েছে ২৩ লাখ ৯২ হাজার ৯০৯টি। আর আমানত বেড়েছে ৬১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিং ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি রয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এ দুই মাধ্যম দেশজুড়ে আর্থিক লেনদেনকে সহজতর করেছে। ফলে বিশেষ ব্যাংক হিসাবের বড় একটি অংশে লেনদেন হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বিশেষ হিসাব চালুর তথ্য প্রতি তিন মাস পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া হলেও কতগুলো হিসাব সচল আছে, সে ব্যাপারে কোনো পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত করা হয়নি। তবে এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এটি বলা যায়, বিশেষ হিসাবগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশেই লেনদেন হচ্ছে না।
জানা গেছে, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে বিশেষ ব্যবস্থায় অ্যাকাউন্ট খোলার কার্যক্রম নেয়া হয়। এসব শ্রেণি পেশার মধ্যে রয়েছে কৃষক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাভোগী, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র জীবনবীমা পলিসি গ্রহীতা, অতিদরিদ্র উপকারভোগী, অতি-দরিদ্র মহিলা উপকারভোগী, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সুবিধাভোগী, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়া ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, তৈরি পোশাকশিল্পে কমর্রত শ্রমিক, চামড়া ও পাদুকাশিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, স্কুলের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী পথশিশু-কিশোর, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে অনুদানপ্রাপ্ত দুস্থ ব্যক্তি, আইলাদুর্গত ব্যক্তি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা। এখানে ন্যূনতম ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার নিয়ম করা হয়। এগুলোয় সর্বনিম্ন জমার বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হয়।
মোট ৪০ শতাংশ হিসাব কৃষকদের
বিভিন্ন খাতে খোলা বিশেষ অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে মোট ৪০ শতাংশ হিসাব কৃষকদের।
গেল এক বছরে কৃষকের ১০ টাকার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬০টি। গত ডিসেম্বর শেষে বিভিন্ন ব্যাংকে কৃষকের নামে খোলা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৮টি। আর এসব হিসাবে আমানত জমা হয়েছে ৫১১ কোটি ৩৭ লাখ।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৯৭ লাখ ২৮ হাজার ৫১৮টি আর আমানত ছিল ৪০৬ কোটি ৮৬ লাখ। এক বছরের ব্যবধানে কৃষকের হিসাবের ১০৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার আমানত বেড়েছে।
তবে কৃষকদের চালু করা ব্যাংক হিসাবের প্রায় ৮০ শতাংশে লেনদেন হচ্ছে না বলে জানান ব্যাংকাররা।
মুক্তিযোদ্ধাদের আমানত বেড়েছে
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাব সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯৭৫টি। যা ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৮০টি। এক বছরের ব্যবধানে মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাব সংখ্যা কমেছে ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
হিসাব সংখ্যা কমলেও মুক্তিযোদ্ধাদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের আমানত রয়েছে ৭৮৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
অতি দরিদ্র, পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের হিসাব
একবছরে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ২১ দশমিক ৯৬ শতাংশ আর আমানত বেড়েছে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ। অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হিসাব ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার ৮১৪ টি। এতে আমানতের পরিমাণ ২২৯ কোটি টাকা।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় হিসাব রয়েছে ৯১ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৪টি। আর আমানত রয়েছে ৮০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এক বছরে হিসাব বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।
তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৪টি হিসাবে আমানত রয়েছে ২২৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এক বছরের হিসাব সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এছাড়া অন্যান্যদের হিসাব রয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ১৯৬ টিতে আমানত রয়েছে ৬২২ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
হিসাবের ৫৫ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বেশি কাজ করছে সরকারি ৮ ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৭৮ হাজার ৩১টি হিসাব। যা মোট হিসাবের ৫৫ শতাংশ।
বিশেষায়িত ব্যাংকে হিসাব রয়েছে ২৭ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে হিসাব রয়েছে ১৮ শতাংশ।
এসব ব্যাংকের মধ্যে পুঞ্জীভূত হিসাবের শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। এতে হিসাব রয়েছে ২৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ আর আমানত রয়েছে ৪০ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে হিসাব ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ আর আমানত ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকে হিসাব রয়েছে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ আর আমানত জমা রয়েছে ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ। এছাড়া জনতা ব্যাংকে হিসাব রয়েছে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ।