ডেস্ক নিউজ ঃ আগামী জাতীয় নির্বাচনেও সব আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার করতে চায় না নির্বাচন কমিশন। সব মিলিয়ে এক শ টি আসনে এই যন্ত্র ব্যবহারের চিন্তা আছে তাদের।
অবশ্য কমিশনের কাছে যতগুলো ইভিএম মেশিন আছে, তাতে সব আসনে এই মুহূর্তে মেশিনে ভোট করা সম্ভবও হবে না।
কমিশনের হাতে এই মুহূর্তে যন্ত্র আছে দেড় লাখ। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী সব আসনে ইভিএমে ভোট নিতে হলে যন্ত্র লাগবে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে যতটুকু সময় আছে, সে সময়ের মধ্যে যদি রাজনৈতিক দলসহ সবার যদি আস্থা অর্জন করা যায়, যদি যথেষ্ট ফান্ড থাকে, তারা যদি সংসদ নির্বাচনের আগে আরও কিছু ইভিএম দিতে পারে, তাহলে ম্যাক্সিমাম ১০০ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
ভবিষ্যতে সব আসনেই ইভিএমে ভোট করার পক্ষে তিনি। তবে সে জন্য আস্থা তৈরি ও বাজেটের বিষয়টি মাথায় রাখতে হচ্ছে।
মো. আলমগীর বলেন, ‘যদি আস্থা সৃষ্টি করতে পারি আর যদি বাজেটের কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে ৩০০ আসনে করার চিন্তাভাবনা করছি। প্রতিবেশী দেশ ভারত পারলে আমরা পারব না কেন?’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা একটা ছোট নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে এর তুলনা হয় না। এই ভোটে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে পাইলটিং করা হচ্ছে। আমরা যে ওপেন চ্যালেঞ্জে যাব, তার আগে তো আমাদের পাইলটিং করতে হবে। কুমিল্লায় ব্যবহার করে যদি দেখি কোনো ত্রুটি নাই, তাহলে আমাদের আস্থা বাড়বে আমরা চ্যালেঞ্জ দিতে সাহস পাব।’
গত সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ভোট নেয়া হয় এই যন্ত্রে। এর পর গত তিন বছরে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবহার করা হয়েছে ইভিএম।
এই যন্ত্রে ভোটারদের অনভ্যস্ততার কারণে ধীর গতি, কোথাও কোথাও আঙ্গুলের ছাপ না পাওয়াসহ ছোটখাট কিছু সমস্যা দেখা দিলেও বড় কোনো অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপি ও সমমনাদের ইভিএম আপত্তি আছে। তারা মনে করে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এটি। এ কারণে কারচুপি সম্ভব।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সংলাপেও বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে এই যন্ত্রে ভোট কারচুপি করা সম্ভব- এমন দাবি নাকচ করেছে নির্বাচন কমিশন। তারা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছে, এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। কমিশনের সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কেউ এগিয়ে আসেনি।
যন্ত্র কত ইসির কাছে
বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র থাকতে পারে আড়াই লাখের মতো।
সব দলের অংশগ্রহণে এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩, কক্ষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭, ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন।
দশম সংসদ নির্বাচনে দেশে ভোট হয়েছে অর্ধেকের মতো আসনে। বাকিগুলোতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট হওয়ায় সেখানে কেন্দ্র সংখ্যা ছিল কম।
সব দলের অংশগ্রহণে গত সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। আর বুথ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ টি, ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন।
এখন ভোটার ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। বছরে বাড়ে গড়ে ১৫ লাখের মতো। সেই হিসাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটার হতে পারে সাড়ে ১১ কোটির বেশি। ফলে ওই নির্বাচনে কেন্দ্র আর বুথের সংখ্যার আরও বাড়াতে হবে।
প্রতিটি বুথে গড়ে ১.৫ টি করে ইভিএম থাকে। অর্থাৎ প্রতি ১০টি ইভিএমের বিপরীতে পাঁচটি থাকে ব্যাকআপ হিসেবে।
এই হিসাবে কমিশনের কাছে যে দেড় লাখ ইভিএম আছে, সেগুলো আসলে এক লাখ বুথে ব্যবহার করা যাবে।
আগামী নির্বাচনে বুথ হতে পারে ২ লাখ ৪০ হাজার। সব বুথে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে কমিশনের হাতে থাকতে হতো তিন লাখ ৬০ হাজার ইভিএম।
ইভিএমে পরীক্ষা করতে দিতে রাজি নির্বাচন কমিশন
বিভিন্ন দল ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলছেন, এসব সংশয়ের কোনো ভিত্তি নেই। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভারতের ইভিএমের চেয়ে আমাদের ইভিএম টেকনিক্যালি অনেক সাউন্ড। আমাদের কাছে যেটা আছে এটা একুরেটলি ফাংশন করে। কোনো রকম ম্যানিপুলেট করা বা কোনো রকম ভুল করার সুযোগ নাই।’
মেশিনে যে কোনো কারিগরি ত্রুটি থাকলে তা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান তিনি। বলেনম ‘প্রতিটি বুথে অতিরিক্ত ইভিএম দেয়া থাকে, যাতে কোনো রকম বিঘ্নিত না হয়।’
ইভিএমের ত্রুটি বের করতে দেশের প্রথিতযশা কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চান এই কমিশনার। বলেন, ‘যারা এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ, তারা যদি ত্রুটি বের করতে পারে, তাহলে আমরা সেই ত্রুটিগুলো সংশোধনে যাব।
‘আমাদের প্রধান স্টেকহোল্ডার রাজনীতিবিদ, তাদেরকে আহ্বান জানাব, আপনারা আপনাদের বিশেষজ্ঞ প্রেরণ করেন, দেখেন কোনো ত্রুটি আছে কি না।’
তিনি বলেন, ‘আমদের দেড় লাখ ইভিএম আছে। যেটা আপনাদের মনে হয় র্যানডমলি পরীক্ষা করেন। এরপরে যদি এরা কোনো ত্রুটি না পায় তাহলে এটা এভাবে থাকবে।’
কোনো দলকে ভোটে আনতে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে না
বিএনপি ও সমমনাদের বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা থাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও আসছে না বিরোধী পক্ষ। এর মধ্যে কমিশন তার প্রথম পরীক্ষা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে।
এই ভোটে বিএনপিকে আনতে কমিশনের কোনো বিশেষ পদক্ষেপ থাকবে কি না- এমন প্রশ্ন ছিল আলমগীরের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করা যে নির্বাচন হবে আপনারা আসেন।
‘সেই আহ্বান নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এখন কেউ যদি রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তারা নির্বাচনে আসবেন না, সেটা তো তাদের সিদ্ধান্ত।