সারোয়ার হোসেন : রাজশাহীর তানোরে উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী বিদ্রোহী বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার ক্যাবল ব্যবসার কন্ট্রোল রুমের দুটি সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে হেলমেট পরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত্রি প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার কলমা ইউপির চৌরখৈর গ্রামে ঘটে ন্যাক্কার জনক ঘটনাটি। এমন ঘটনায় বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী বাবু চৌধুরীর ছেলে রানা চৌধুরীর উপর দলীয় নেতাকর্মীরা ফুঁসে উঠেছেন। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা আলামত সংগ্রহ করেছেন সিনিয়র সার্কেল এএসপি/ ডিএসবি রুবেল আহম্মেদ ও থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি রাকিবুল হাসান। অবশ্য ফায়ার সার্ভিস পৌছার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলমা ইউপির চৌরখৈরগ্রামে চেয়ারম্যান ময়নার ক্যাবল ব্যবসার কন্ট্রোল রুম রয়েছে। রুমের উত্তরে কাচা মাটির ঘরে ক্যাবল বা ডিস ব্যবসার যাবতীয় মালামাল রাখা ছিল। লাখ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তখন চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না উপজেলা পরিষদে অবস্থান করছিলেন। পরে দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন তিনি। রুমের দায়িত্বে থাকা গোলাপ জানান আমি রুমেই থাকা অবস্থায় বারবার ইট ছুড়ে মারছে এবং মনে হচ্ছে রুমের বাহিরে লোকজন আছে। প্রথমে বের হয়ে কাউকে দেখতে পায়নি। আবার রুমে গিয়ে কাচা মাটির ঘরে আগুন দেখতে পেয়ে বের হয়ে দেখি হেলমেট পরা অবস্থায় জালানা দিয়ে আগুন দিচ্ছে। আমি তাকে ধরে ফেলি। কিন্তু সে আমাকে মেরে পালিয়ে যায়। তার আগে কয়েকজন পালিয়েছে। আমি যদি ঘুমিয়ে যেতাম নিজে পুড়তাম এবং সব মালামাল পুড়ে যেত।
স্থানীয়রা জানান, বিজয়ী হওয়ার দিনেই উপজেলা চেয়ারম্যানের মত ব্যক্তির ব্যবসায় আগুন দিতে পারেন যারা, তারা যে তাকে হত্যাও করবেনা এটাও তো বলা যাবেনা। এর জন্য দায়ী করেন রানা চৌধুরীকেই। চেয়ারে না বসতেই এমন ঘটনা কেউ আশা করেনি। এদেরকে আইনের আওতায় এনে চরম শাস্তি দেওয়া দরকার। তাহলে কেউ এধরনের কাজ করতে সাহস পাবেনা।
চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না জানান, বিজয়ী প্রার্থীর লোকজনরাই এই ধরনের কাজ করেছে। কারন ভোটের বেশ কিছুদিন আমি নিজ গ্রাম চৌরখৈরে থাকা অবস্থায় ফজরের নামাজের পর থেকে বক্স বাজানো শুরু করত এবং আমার সাথে ফাসাদ সৃষ্টির জন্য প্রার্থীর ছেলে রানা নানা ধরনের হুমকি দিত বিভিন্ন জায়গায়। সে দাঙ্গাবাজ ছেলে। আমি নেতাকর্মীদের উত্তেজিত হতে নিষেধ করেছি। যা হবে আইনের মাধ্যমেই হবে বলেও জানান তিনি।
তবে বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী বাবু চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে জানান আমরা তখন ফলাফল নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদে ছিলাম। কোন তৃতীয় পক্ষ এধরনের অমানবিক কাজ করে ফায়দা লুটতে চায়। আমি এধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দিই না। তদন্ত করে প্রকৃত দোষীকে আইনের আওতায় আনতে পারলেই ঘটনার রহস্য বের হবে বলে মনে করেন তিনি । আমি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী না। আমার রাজনীতির সুনাম নষ্ট করতেই এধরনের কাজ করেছে বলেও মন্তব্য তার।
জানা গেছে, ১১ নভেম্বর তানোর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনে কলমা ইউপিতে নৌকার প্রার্থী মাইনুল ইসলাম স্বপন দলের বিদ্রোহী চশমা প্রতীকের প্রার্থী বাবু চৌধুরীর নিকট পরাজিত হন।
থানার ওসি রাকিবুল হাসান রাকিব জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যাবতীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। অতি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। এখনো মামলা হয়নি, হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষী ব্যক্তি যতই ক্ষমতাধর হোক কোন ছাড় নেই।